হল খোলার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

স্থানীয়দের সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় অনেকেই বলছেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাস ও হল বন্ধ থাকার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। হল বন্ধ থাকার কারণে অস্থায়ীভাবে বিভিন্ন জায়গায় থাকছেন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীরা হল খোলার জন্য বিচ্ছিন্নভাবে বলে আসছিলেন।

তবে করোনায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হল খোলার বিষয়ে তড়িঘড়ি করতে চায়নি সরকার। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও সরকারি সিদ্ধান্তে অনড় থেকে হল খোলার বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। শেষ পর্যন্ত হল ও ক্যাম্পাস খোলার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। ঢাবি, জাবির শিক্ষার্থীরা তালা ভেঙে হলেও প্রবেশ করেছেন।

জোর করে হলে ঢুকে পড়ল ঢাবি শিক্ষার্থীরা

হল ও ক্যাম্পাস খোলার দাবিতে আন্দোলন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের শিক্ষার্থীরা জোর করে হলে ঢুকে পড়েছেন। সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে দিতে শহীদুল্লাহ হলে ঢুকেছেন বলে জানা গেছে। এ সময় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

হল খুলে দেওয়ার দাবিতে ঢাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা কিছু হলের রুমে ঢুকে পড়েছেন, আর একদল শিক্ষার্থী হল মাঠে ক্রিকেট খেলা শুরু করেন।

জাবিতে দুই দফায় ভাঙল হলের তালা

তালা ভেঙে আবারও হলের ভেতর অবস্থান নিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে প্রবেশ করেন তারা।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে মিছিল বের করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি মেয়েদের হলগুলো অতিক্রম করে বঙ্গমাতা হলের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

তালা ভেঙে হলে ঢুকছেন জাবি শিক্ষার্থীরা/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়েছেন। এরপর আমরা মিছিল নিয়ে ফজিলাতুন্নেছা হলে যাব। এই দুই হলেই ছাত্রীরা অবস্থান করবেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেহেতু আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ সেকারণে আমরা আর হল ত্যাগ করছি না।

এর আগে, স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে নিজেদের নিরাপত্তায় শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) তালা হলে অবস্থান নেন জাবির কিছু শিক্ষার্থী। সোমবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহ ছেড়ে দিতে শিক্ষার্থীদের আহ্বান করেন সংশ্লিষ্ট হল প্রশাসন। তবে হল প্রশাসনের এমন আহ্বানে সাড়া না দিয়ে হলেই অবস্থান করার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া যেসব হলে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন না এমন অন্তত দুটো হলের তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।

নিরাপত্তাহীনতায় ক্যাম্পাসেই রাত কাটাচ্ছেন ববি শিক্ষার্থীরা

মেসে গিয়ে শিক্ষার্থীকে মারধর করার ঘটনায় প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার এবং আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা। রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে অবস্থান নিয়েছেন তারা।

শিক্ষার্থীকে মারধর করা মূল আসামি গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানেই থাকবেন বলে জানিয়েছেন মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সুজয় শুভ।

হল খুলে দেওয়ার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন ববি শিক্ষার্থীরা

তিনি বলেন, মামলার প্রধান আসামি এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। ক্যাম্পাসের বাইরে থাকলে আমরা আবারও নির্যাতনের শিকার হতে পারি। সেজন্য ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছি।

তালা ভাঙার হুমকি রাবিতে

ফেব্রুয়ারিতে হল না খুললে মার্চের প্রথম সপ্তাহে তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন রাবি শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে আন্দোলন করার জন্য জড়ো হতে থাকেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সঙ্গে আলোচনায় এ হুমকি দেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এম লুৎফর রহমান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে আন্দোলন থামানোর চেষ্টা করেন। তার সঙ্গে কথা বলে শিক্ষার্থীরা হলসহ ক্যাম্পাস খুলে দিতে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেন।

রাবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন প্রক্টর অধ্যাপক এম লুৎফর রহমান/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

এ সময় প্রক্টর তাদের জানান মঙ্গলবার (২৩) ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুর কমিশনে (ইউজিসি) বৈঠকে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি জোরালোভাবে উপস্থাপন করবেন উপাচার্য।

হল ও ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা

করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আগামী মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ক্লাস শুরু হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

তিনি বলেছেন, ২৪ মে (সোমবার) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। তার এক সপ্তাহ আগে ১৭ মে (সোমবার) বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব আবাসিক হল খুলবে।

এর আগেই হলে উঠতে চান ঢাবি শিক্ষার্থীরা

হল ও ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর এমন নির্দেশনা মানতে নারাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা ১ মার্চ থেকে হলে উঠতে চান। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় টিএসসি মোড়ে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন থেকে এ দাবি করেন তারা। টিএসসি মোড়ের মানববন্ধনে শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ‘মোদের দাবি একটাই, হল সব খোলা চাই; এক দফা এক দাবি হল, খুলবে ফেব্রুয়ারি’ স্লোগান দেন তারা।

স্থানীয়দের সঙ্গে জাবি শিক্ষার্থীদের কী হয়েছিল?

গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি হলও বন্ধ থাকায় দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতো ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকায় বাসা ভাড়া ও বিভিন্ন উপায়ে অবস্থান করছেন জাবি শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, গত ১১ ফেব্রুয়ারি ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী। সে সময় স্থানীয় কিছু ছাত্রলীগ সমর্থিত নেতার গায়ে হাত তোলেন শিক্ষার্থীরা। যদিও পরবর্তী সময়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এলাকার ছাত্রলীগ নেতারা সমাধানে বসতে রাজি হয়নি। এরই প্রেক্ষাপটে শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় স্থানীয়রা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় মসজিদগুলোতে মাইকিং করে স্থানীয়দের জড়ো করা হয়। এ ঘটনায় অন্তত ৪০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। এর মধ্যে ১১ জন গুরুতর আহত।

এ ঘটনায় স্থানীয়দের দাবি, সংঘর্ষে ক্রিকেট ইস্যু সামনে এলেও এর পেছনে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গেরুয়া ও ইসলামনগর এলাকায় প্রভাব বিস্তার, ক্ষমতা দেখিয়ে স্থানীয় লোকজনকে মারধরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড দেখিয়ে বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির করা শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করেই তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এর বাইরে তাদের সঙ্গে স্থানীয়দের কোনো বিবাদ নেই। শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র পড়ালেখার উদ্দেশেই গেরুয়া কিংবা ইসলামনগর এলাকায় বসবাস করছিলেন।

এফআর