হল খুলে দেওয়ার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন ববি শিক্ষার্থীরা

হামলাকারী প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার এবং আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা। রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরো অবস্থান নিয়েছেন তারা। 

মূল আসামি গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানেই থাকবেন বলে জানিয়েছেন মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সুজয় শুভ। তিনি বলেন, মামলার প্রধান আসামি এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। ক্যাম্পাসের বাইরে থাকলে আমরা আবারও নির্যাতনের শিকার হতে পারি। সেজন্য ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছি।

আরেক শিক্ষার্থী সিয়াম জামান বলেন, আমাদের হত্যাচেষ্টাকারীরা বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ছাড়া আমাদের আর কোথাও নিরাপত্তা নেই। প্রশাসনও আমাদের নিরাপত্তায় কিছু করেনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের কথা চিন্তা করেও হল খুলে দিচ্ছে না। এখন আমরা কোথায় যাবো? এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান নিয়েছি। আমরা রাত-দিন এখানেই থাকবো।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী অমিত হাসান রক্তিম, মাহমুদুল হাসান তলাম জানান, মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহি, প্রাঞ্জল রায়, অর্থনীতি বিভাগের তৌফিকুল সজল, ভূতত্ব ও খনিবিদ্যার আল সামাদ শান্ত,  রাষ্ট্রবিজ্ঞানের রাফিউর রহমান রাফি, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের হৃদয় খান, গণিত বিভাগের হাসিব খান, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের রাকিব হাওলাদার, সিএসই বিভাগের তৌহিদ ফেরদাউস, ইংরেজি বিভাগের জুবায়েরসহ কমপক্ষে ২০ জন শিক্ষার্থী অবস্থান কর্মসূচিতে রয়েছেন। আন্দোলনে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বাড়বে।

মেসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মারধরের বিচার চেয়ে টানা পঞ্চম দিনের মত রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকা‌লে বিশ্ব‌বিদ‌্যাল‌য়ের শহীদ মিনা‌রে পুষ্পস্তবক অর্পণ ক‌রেন তারা। প‌রে তারা বিশ্ব‌বিদ‌্যাল‌য়ের গ্রাউন্ড ফ্লো‌রে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন। অবস্থান কর্মসূচির পর শিক্ষার্থীরা বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়‌কে বি‌ক্ষোভ মি‌ছিল ক‌রেন। সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এদিকে সোমবা‌র (২২ ফেব্রুয়ারি) বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় দিবস থাকায় সড়ক অবরোধ কর্মসূচি বাদ দিয়েছে আন্দোলনরতরা। তবে বি‌ক্ষোভ, পোস্টার প্রেজে‌ন্টেশন ও মশাল প্রজ্জ্বলন কর‌বেন শিক্ষার্থীরা। আর মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) থে‌কে ফের সড়ক অব‌রোধ কর‌বেন। 

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) গভীর রাতে নগরের রূপাতলী হাউজিং এলাকায় বসবাসকারী অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার, আসামিদের নাম উল্লেখ করে মামলা এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাসহ তিন দফা দাবিতে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে চাপের মুখে পড়ে কোতয়ালী থানা পুলিশ দুই শ্রমিককে গ্রেপ্তার করে।  সেই শ্রমিকদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে যান শ্রমিকরা। বাস মালিক-শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি অবরোধ-ধর্মঘটে বরিশাল থেকে দক্ষিণের পাঁচ জেলাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি পথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিকেল ৫টার দিকে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে তাদের অবরোধ কর্মসূচি একদিনের জন্য স্থগিত করলে বাস মালিক-শ্রমিকেরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন। যদিও পরিবহন শ্রমিক ও শিক্ষার্থীরা সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) থেকে পুনরায় মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর