হল খোলার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উত্তাল
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর পরিবহন শ্রমিকদের হামলার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশের শিক্ষাঙ্গন। এসব ঘটনার সঙ্গে যুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা এবং আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে দেশের অন্তত ছয়টি ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করছেন। করোনার কারণে প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পর এ ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় ফের মুখর হতে শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো।
হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সেদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে হল খোলার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলমগীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, সম্প্রতি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নিয়ে শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা যুক্ত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিভাবে খুলে দেওয়া যায় তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হলেও হল খুলে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। সরকারের উপরমহল যে সিদ্ধান্ত দেবে সেটিই চূড়ান্ত। তবে চলতি সপ্তাহে হয়তো একটি সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
তিনি আরও বলেন, দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর যেভাবে হামলা হয়েছে তা নিন্দনীয়। এ ঘটনার সঙ্গে যুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা জন্য প্রশাসন কাজ করছে।
শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম প্রসঙ্গে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে প্রস্তুত, কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নয়। তিনি বলেন, যখনই পরীক্ষা শুরু করি না কেন, তার অন্তত সাত দিন আগে আমরা সব আবাসিক হল খুলে দেবো। হল না খুলে আমরা শিক্ষার্থীদের কোনো পরীক্ষা নেবো না।
এদিকে হল খুলে দেওয়ার দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, বরিশাল, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শনি ও রোববার দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে দিনভর বিক্ষোভ করে আল্টিমেটাম দিয়েছে। এরইমধ্যে শনিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা হলের তালা ভেঙ্গে হলের প্রবেশ করেছে।
হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে জাবি প্রশাসনকে আল্টিমেটাম
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আল্টিমেটাম দেন তারা। এসময় আরও ৬টি দাবির কথা জানান তারা। তাদের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে-ঘটনার সুষ্ঠু বিচার, গেরুয়ায় অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের নিরাপদে ক্যাম্পাসে প্রত্যাবর্তন, হল খুলে দিয়ে মৌলিক সেবা নিশ্চিত করা এবং হামলার সময় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অস্থিরতার দায় প্রশাসনকে নিতে হবে।
হল খুলতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম রাবি শিক্ষার্থীদের
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসহ ক্যাম্পাস খুলে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করার দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাস। রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টা থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। এ সময় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি না মানলে কঠোর কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন তারা। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের আমতলা থেকে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবাহানের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। এসময় অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী এতে অংশ নেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহাব্বত হোসেন মিলন বলেন, দেশের সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও উদ্দেশ্য-প্রণোদিতভাবেই আবাসিক হলগুলো বন্ধ রেখেছে। ক্যাম্পাস খুলে না দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা সেশনজটসহ ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে।
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থানের কারণেই আজ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলার শিকার হচ্ছে। ক্যাম্পাসের বাইরে আমরা এখন আর নিরাপদ না। প্রশাসনের কাছে জোর দাবি, তারা যেন অতিদ্রুত ক্যাম্পাস ও হল খুলে দেন।
শাবিপ্রবির হল খুলতে দুদিনের আল্টিমেটাম
আবাসিক হল খুলে দিতে দুদিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বরাবর লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে এ আল্টিমেটাম দেন তারা।
লিখিত অভিযোগে শিক্ষার্থীরা বলেন, আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আবাসিক হলগুলো খুলে দিতে হবে। পরীক্ষার আগে নতুন করে মেস বা বাসা ভাড়া নিতে শিক্ষার্থীরা অর্থনৈতিক সংকট, নিরাপত্তাহীনতাসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্ন বর্ষের অনেক শিক্ষার্থী সিলেটে চলে এসেছেন। এতে মেস/বাসা মালিকরা ভাড়া দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা আবাসন সংকটে ভুগছেন। তাই অবিলম্বে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবি জানানো হচ্ছে। এসময়ের মধ্যে হল খোলার নোটিশ জারি না করলে তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করা হবে।
শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে ছাত্র উপদেষ্টা ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রাশেদ তালুকদার বলেন, আবাসিক হল খুলে দেওয়ার বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সরকারের উচ্চ মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দ্বিতীয় দফায় পরীক্ষা শুরুর এক সপ্তাহ আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হল খুলে দেওয়া হবে।
এদিন সন্ধ্যার পর উপাচার্য ভবনের মূল ফটকে তালা দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কিলো রোডের সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেন তারা। পরে ছাত্র উপদেষ্টা ও নির্দেশনা পরিচালক এসে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
হল খুলে দেওয়ার স্লোগানে উত্তাল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
হল খোলার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রোববার ( ২১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়না চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা।
মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক। তবে সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে তো কিছু করা যাচ্ছে না।
২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হল খুলে দেওয়ার দাবি কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের
আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপে ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় শিক্ষার্থীরা এ দাবি জানান। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় তারা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতিবাদ জানান।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হল খুলতে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। যদি হল খুলে না দেওয়া হয়, তবে তার যৌক্তিক জবাব প্রশাসনকে দিতে হবে। প্রশাসন শিক্ষার্থীদের কথা আমলে না নিলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
এনএম/আরএইচ