বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন এলাকায় খাবার ও পানি সরবরাহ বন্ধ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন গেরুয়ায় অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া স্থানীয় বাড়িমালিকদের ‘চাপ প্রয়োগ’ করে শিক্ষার্থীদের জন্য পানি ও বিদ্যুৎ-সেবাও বন্ধ রাখতে বাধ্য করা হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন হাজারো শিক্ষার্থী।
রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনাকালীন ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া গেরুয়া, ইসলামনগর এবং জামসিং এলাকার মেসগুলোতে অবস্থান করতেন। তবে ১৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ক্রিকেট টুর্নামেন্টকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় স্থানীয়দের।
এ সময় অন্তত ৪০ জন শিক্ষার্থী ও ৪ জন স্থানীয় বাসিন্দা আহত হন। তাদের মধ্যে অন্তত ১১ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীদের এমন সংঘর্ষে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো এলাকায়।
এদিকে হামলা ও সংঘর্ষের পরে স্থানীয় মেসগুলোতে অবস্থান করতে ‘নিরাপত্তার অভাব’ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। তবে সরকারের নির্দেশনা ছাড়া হল খোলা সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপরেই সবগুলো আবাসিক হলের তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তা না পাওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী হলে উঠতে পারছেন না। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন এলাকায়ও থাকতে পারছেন না। ফলে বিপাকে পড়েছেন এসব শিক্ষার্থী। এদিকে বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার সব খাবারের দোকান। ফলে চরম খাবার-সংকট দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে বর্তমান শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া গেরুয়া, ইসলামনগর ও জামসিং এলাকার মেসগুলোয় সদ্য সাবেক অনেক শিক্ষার্থী অবস্থান করে ‘চাকরির প্রস্তুতি’ নিতেন। যারা হলে উঠতেও পারছেন না আবার বন্ধ রয়েছে খাবার, পানি, বিদ্যুৎ।
এর আগে দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামিহা হাসান অভিযোগ করে বলেন, গেরুয়ায় স্থানীয়রা খাবারের দোকানে খাবার সরবরাহ এবং খাবারের পার্সেল সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছেন। এ ছাড়া গতকাল শনিবার থেকে তাদের মেসগুলোয় পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ১০০ জনের খাবার সরবরাহ করতাম। তবে এখন পুরোটা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। স্থানীয়রা চাপ দিচ্ছেন, বলছেন, খাবার সরবরাহ বন্ধ না করলে ‘সমস্যা হবে’। ফলে বাধ্য হয়ে খাবার সরবরাহ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। আমিসহ আরও অন্তত ১২ জন ব্যবসায়ী আমরা হোম ডেলিভারি সার্ভিস চালু রেখেছিলাম তাতে অন্তত ৭০০ নিয়মিত ভোক্তা ছিল আমাদের। এখন আমরা কাউকে খাবার সরবরাহ করতে পারছি না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, খাবার সরবরাহ বন্ধ রেখে টেকনিক্যাল চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক এলাকায় যেসব দোকান আছে, সেখানে খাবার খেতে পারে। নিজস্ব কোনো সিদ্ধান্তে নয় বরং সরকারি সিদ্ধান্তে বন্ধ আছে বিশ্ববিদ্যালয়।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে খাবারের দোকানগুলো খুলতে সরকারি নির্দেশনার প্রয়োজন আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চালু করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু বন্ধ, সেহেতু আমাদের কিছু করার নেই। তবে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত এলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
এনএ