ঢাবির পরিবহন সেবায় অর্ধেক শিক্ষার্থী ‘সন্তুষ্ট’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন নীতি সম্পর্কে ৯৫ দশমিক ৮১ শতাংশ শিক্ষার্থীই কিছু জানেন না কিংবা ভাবেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পরিসেবা, সন্তুষ্টি ও সমস্যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ওপর গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সেবা এবং শিক্ষার্থীদের সন্তুষ্টিবিষয়ক গবেষণাটি ইন্ডিয়ান জার্নাল অব সোশ্যাল সায়েন্স অ্যান্ড লিটারেচারে বৃহস্পতিবার প্রকাশ পায়।
বিজ্ঞাপন
এ গবেষণায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৭টি রুটে যাতায়াতকারী শিক্ষার্থীদের (প্রতি রুট থেকে ২০ জন করে মোট ৩৪০ জন অংশগ্রহণকারী) কাছ থেকে সেমি-স্ট্রাকচারড মিক্সড মেথড সার্ভের মাধ্যমে মত নেওয়া হয়েছে। এ সার্ভেতে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ (৫০ অনুপাত ৫০) কঠোরভাবে বজায় রাখা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের গবেষণা পরিচালক কাজী সামিও শীশের তত্ত্বাবধানে এ গবেষণা পরিচালনায় ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের শিক্ষার্থী এবং গবেষণা সংসদের সভাপতি নাসরিন জেবিন ও সদস্য তাসফি আক্তার, লোক প্রশাসন বিভাগের আব্দুল্লাহ আল নোমান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সায়মা পারভীন, উর্দু ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের আব্দুল কাদের, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ইমদাদ উদ্দীন প্রমুখ।
গবেষণা থেকে পাওয়া ফলে দেখা গেছে, ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের ‘নিয়মানুবর্তিতা’ তাদের সময়মতো ক্লাসে উপস্থিত হতে সাহায্য করে। ক্লাস বা পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বাসের অভ্যন্তরীণ পরিবেশকে ‘অনুকূল’ মনে করেন মাত্র ১৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী উল্লেখ করেছেন যে, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাসে নিয়মিত যাতায়াত করে শিক্ষা, চাকরি ও অন্যান্য বিষয়ে পরামর্শ পেয়ে থাকেন, যা ক্যারিয়ার গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
গবেষণা ফলে উঠে এসেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনে প্রতিদিনের যাত্রায় নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হন। সেসব সমস্যার মধ্যে রয়েছে- আসনের স্বল্পতা, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে যাতায়াত, বাসের ভেতরে সংকুচিত বা সাফোকেটিং পরিবেশ, রাস্তায় যানজট, বাসের সময়সূচি সম্পর্কে আপডেট পেতে ঝামেলা।
এছাড়াও মানসিক চাপ, বেপরোয়া ড্রাইভিং, রাস্তার বেহাল দশা, ব্যাগ, পার্স ও মোবাইল চুরি হওয়া, পিক-পকেটিং, রাস্তার পাশে থাকা গাছ বা বড় ডালের সঙ্গে বাসের ধাক্কা ও অন্যান্য ছোট দুর্ঘটনা, বাসের দরজা থেকে ছিটকে পড়ে যাওয়া, সিনিয়র ও বাস কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে অসহযোগিতাপূর্ণ আচরণ বিষয়েও অনেকে মন্তব্য করেছেন।
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহনের ড্রাইভার, স্টাফ ও কর্মচারীদের দক্ষ ও ভালো মনে করেন। তবে ২৪ শতাংশ শিক্ষার্থী চালকদের বেপরোয়া ড্রাইভিং, স্টাফদের খারাপ আচরণ বিষয়েও মন্তব্য করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বা ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো নির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেই বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
যেহেতু বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী প্রতিদিনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ব্যবহার করেন, তাই পরিবহন সংক্রান্ত বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষের অবিলম্বে এ অঙ্গনে সুদৃষ্টি দেওয়া উচিত বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের সভাপতি ও এ গবেষণার প্রধান গবেষক নাসরিন জেবিন।
তিনি বলেন, ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড শিক্ষার্থীদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে যাতায়াত করেন। তাদের জন্য কিছু নির্ধারিত আসন থাকা আবশ্যক। সব ধরনের শিক্ষার্থীরা সমান সুযোগ পাচ্ছেন, এটিই তো বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য। তবে এক্ষেত্রে ইকুয়ালিটি নয়, বরং ইকুয়িটি নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে নিয়মিত যাতায়াতের বিষয়টি যেন আরও আরামদায়ক ও শিক্ষার্থীবান্ধব হয়, তা মাথায় রেখে গবেষণা প্রতিবেদনে কতগুলো সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিদ্যমান বাস মেরামত, বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি, ট্রিপের সংখ্যা বৃদ্ধি, দক্ষ চালক নিয়োগ, বাসের পরিবেশ ও সুবিধাসমূহ উন্নত করা, বাস কমিটির কার্যক্রম প্রসারিত করা, শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিধা বৃদ্ধি, বাসে ওয়াই-ফাই সুবিধা দেওয়া, নতুন বাস-রুট চালু করা, ভুল রুটের প্রবণতায় কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা বজায় রাখা, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বাস কমিটির সদস্য নির্বাচন নিশ্চিত করা, বরাদ্দকৃত পরিবহন বাজেটের যথাযথ ব্যয়, ট্রাফিক নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতার সংস্কৃতি তৈরি করা, শিক্ষার্থীদের জন্য আসন সুবিধা বাড়ানো ইত্যাদি।
যদি বিষয়গুলো সঠিকভাবে তদন্ত করা হয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তবে পরিবহন সুবিধার ওপর শিক্ষার্থীদের সন্তুষ্টির মাত্রা বাড়বে এবং শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ব্যবহার করে নিরাপদ, আরও স্বাচ্ছন্দ্য এবং সন্তুষ্ট বোধ করবেন, যা তাদের পড়াশোনায় ইতবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন গবেষকরা। যেহেতু ভালো পরিবহন সুবিধা এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক সন্তুষ্টির মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে, তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে একটি ভালো পরিবহন পরিষেবা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।
এইচআর/আরএইচ