আবেদন করে মুক্তিযোদ্ধার সনদ পেতে চাননি গাফ্ফার চৌধুরী
মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য নিজে আবেদন করবেন না বলে জানিয়েছিলেন কিংবদন্তী লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তির জন্য সরকার নির্ধারিত নিয়মে আবেদনের অনুরোধের পরও গাফ্ফার চৌধুরীকে রাজি করানো যায়নি বলে জানান ১৯৭১ সালের যুক্তরাজ্যে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকের উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মোজাম্মেল আলী।
শনিবার যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাইদের সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে ইউকের ভার্চুয়াল স্মরণ সভা ‘আমি কি ভুলিতে পারি’ শীর্ষক আলোচনায় স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে তিনি একথা জানান। সৈয়দ মোজাম্মেল আলী প্রয়াত গাফ্ফার চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
ভার্চুয়াল আলোচনায় গাফ্ফার চৌধুরীর কন্যা ড. তনিমা চৌধুরী বলেন, বাবা ছিলেন আমার জীবনে বট গাছের মতো, ছোট বেলায় আমি বাবার কাঁধে বসে থাকতাম। যদিও গাফ্ফার চৌধুরী বাঙালি জাতীর একজন আইকন, কিন্তু আমার কাছে তিনি শুধুই একজন বাবা। বাবা হিসেবে তিনি ছিলেন আমাদের অনুপ্রেরণা। সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তিনি আমাদের সহযোগিতা করতেন। তবে মৃত্যুর ৩৫ দিন আগে বিনিতার মৃত্যুতে তিনি সবচেয়ে বেশি ভেঙে পড়েছিলেন। দুজন দুই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। ডাক্তারদের অনুমতি না পাওয়ায় পিতা-কন্যার শেষ দেখা হয়নি।
ড. তনিমা বলেন, বিনিতা বাবাকে বলেছিল, ‘বাবা আমি যদি তোমার আগে যাই আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব, তুমি আমার আগে গেলে আমার জন্য অপেক্ষা করো’। বাবা বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুকে এতটাই ভালবাসতেন যে ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর বাবা প্রথম কেঁদেছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকের ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য ও অনুষ্ঠানের চেয়ার বিধান গোস্বামী আবদুল গাফফার চৌধুরীর স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাফ্ফার চৌধুরী চেয়ার স্থাপনের দাবি জানান।
অনুষ্ঠানের মডারেটর সাংবাদিক তানভীর আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী নামে ফেলোশিপ প্রবর্তনের প্রস্তাব দেন।
ভার্চুয়াল আলোচনায় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনের স্মৃতিচারণ করে বক্তৃতা করেন ব্যারিস্টার চৌধুরী হাফিজুর রহমান, ব্যারিস্টার কাজী আশিকুর রহমান, লিংকনস ইন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, জার্মানে নিযুক্ত বাংলাদেশের সম্মানিত কনসাল জেনারেল ইঞ্জিনিয়ার হাসনাত মিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য পলি জাহান ও শওকত আলী বেনু।
অনুষ্ঠানে সিনিয়র অ্যালামনাই ও ম্যানেজমেন্টের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ব্যারিস্টার অজয় রায় রতন, সোনালী ব্যাংক ইউকের সাবেক সহকারী প্রধান নির্বাহী আমীরুল ইসলাম, প্রদীপ মজুমদার, ঝুমুর দত্ত, পুস্প দেব, ফাতেমা লিলি, চিত্রকর মাসুদ মিজান, মোকাররম হোসেন, সাংবাদিক জুনায়েদ জিলানী, আরিফুর রহমান, সুলতানা রশীদ নাসরিনসহ অন্যরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে গাফ্ফার চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন ও অমর একুশের সঙ্গীত রচনার প্রেক্ষাপটের উপর ধারণ করা একাত্তর টেলিভিশনে প্রচারিত আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর শেষ টেলিভিশন সাক্ষাতকার ‘রক্তে রাঙানো একুশের সত্তর’ এর ধারণকৃত অংশ প্রচার করা হয়।
আইএসএইচ