ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ওই হলের ছাত্রলীগের এক কর্মীর বিরুদ্ধে। শনিবার (১৪ মে) রাতে হলের টিভি রুমে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীর নাম সালাহউদ্দিন তারেক। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তারেক বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু ইউনুসের অনুসারী। ভুক্তভোগী সিয়াম ফরাসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সিয়াম বলেন, গত ১৩ মে মধুর ক্যান্টিনে সাদ্দাম (ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক) ভাইয়ের প্রোগ্রাম ছিল। আমি অসুস্থ থাকায় সে প্রোগ্রামে যেতে পারিনি। কিন্তু তারেক (অভিযুক্ত) ভাইয়ের কাছ থেকেই ছুটি নিয়েছিলাম। ভাইকে বলেছিলাম যে আমি অসুস্থ, প্রোগ্রামে যেতে পারব না। তখন তিনি আমাকে ছুটি দেন। পরে রাতে আমাকে গেস্টরুমে ডাকেন।

কিন্তু আমার গেস্টরুমে যেতে একটু দেরি হওয়ায় ভাই আমাকে ‘মুরগী’ হতে বলেন। আমি সংকোচ বোধ করায় তিনি পায়ের জুতা খুলে আমার গায়ে মারেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। 

সিয়াম বলেন, আমিও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, উনিও শিক্ষার্থী সুতরাং আমাকে এরকম অত্যাচার করার অধিকার তার নেই। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

তবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নিজেই পরবর্তীতে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং নিউজ না করার অনুরোধ জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজয় একাত্তর হলের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, তারেক ভাই সবসময়ই এগ্রেসিভ আচরণ করেন, নিজেকে মোস্ট পলিটিক্যাল বলে পরিচয় দেন। এর আগেও তিনি অনেক ছাত্রকে ইচ্ছামত হল থেকে বের করে দেন। এমনকি সালাম না দেওয়ার অজুহাতে তিনি গেস্টরুমে এসে মা-বাবা নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ও রাতে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন।

প্রত্যক্ষদর্শী এক ছাত্রলীগ কর্মী বলেন, তারেক গেস্টরুমে খুবই উগ্র আচরণ করে। সে প্রায়ই জুনিয়রদের গায়ে হাত তোলে। ওরে নিষেধ করলেও সে বাধা মানে না। সিয়ামকেও নির্যাতন করা হয়েছে এবং পরবর্তীতে বিষয়টি কাউকে না বলতে চাপ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া তারেকের বিরুদ্ধে নিজ এলাকা কুমিল্লার চান্দিনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে থানা থেকে মাদক মামলার আসামিদের ছাড়িয়ে দেওয়া, দালালি করে ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন সরকারি সেবা প্রাপ্তিতে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়া এবং এলাকার মানুষকে বিদেশ পাঠানোর নাম করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তারেক মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমরা শাসন করি, আমরাই আদর করি। সে আমাদের দূরের কেউ না। তাকে মারধর করা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু ইউনুস বলেন, আমি অভিযুক্ত এবং ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছি। ভুক্তভোগী নিজেই বলেছেন তার সঙ্গে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমাদের হলে কোনো নির্যাতনকারীকে ছাড় দেওয়া হয় না।

এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির গণমাধ্যমকে বলেন, এ বিষয়ে আমি জেনেছি। আমি এখন ঢাকার বাইরে আছি। হলে গিয়ে বিষয়টি দেখব।

এইচআর/আইএসএইচ