ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃক আয়োজিত মুজিবনগর দিবসের আলোচনা সভায় ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহর দেওয়া বক্তব্যকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে খণ্ডিত ও অসত্য আকারে প্রকাশ করে তার সম্মানহানির অভিযোগ এনে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন এক আইনজীবী।

মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহর পক্ষে আইনজীবী মো. আমিনুল গনী টিটু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, অনলাইন পত্রিকা বিবার্তাটুয়েন্টিফোরডটনেটের সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসি এবং প্রতিবেদক মহিউদ্দিন রাসেল বরাবর এ নোটিশ পাঠান।

আইনি নোটিশে উল্লেখ করা হয়, অধ্যাপক রহমত উল্লাহ মূলত ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস শীর্ষক আলোচনায় উক্ত জাতীয় চার নেতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং একই সঙ্গে খন্দকার মোশতাক আহমেদকে কুলাঙ্গার হিসেবে চিহ্নিত করে ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করেন। কিন্তু ১নং নোটিশ গ্রহীতা (অধ্যাপক সামাদ) উক্ত বক্তব্যের প্রকৃত সত্য জেনেই উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তার সম্মান কলঙ্কিত করার হীন উদ্দেশ্যে প্রকৃত সত্য গোপন করে মনগড়াভাবে বক্তব্য সাজিয়ে খন্দকার মোশতাক আহমেদকেও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন মর্মে মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে প্রতিবাদের নামে ঘোলাটে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, অধ্যাপক রহমত উল্লাহর বক্তব্যের প্রকৃত সত্য গোপন করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অধ্যাপক সামাদের মনগড়া বিকৃত ও বিভ্রান্তিকর মিথ্যা বক্তব্য উল্লিখিত অনলাইন পত্রিকায় (বিবার্তা) তথ্যসূত্র উল্লেখ না করে প্রকাশ করে অধ্যাপক রহমত উল্লাহর ব্যক্তিগত, পেশাগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থানকে কালিমা লেপন করা হয়েছে। তার সম্মানহানিসহ অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে অধ্যাপক রহমত উল্লাহ জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিন দিনের মধ্যে ১৭ এপ্রিল অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহর দেওয়া সম্পূর্ণ বক্তব্য প্রকাশ করে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করতে না পারলে আইনের দ্বারস্থ হবেন বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

আইনজীবী মো. আমিনুল গনী টিটু ঢাকা পোস্টকে বলেন, তারা তাদের মনগড়া একটা বক্তব্য তৈরি করে পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশ করেছে। বক্তব্যের অবশ্যই রেকর্ড আছে, না হয় তারা বললেন কোথা থেকে। রেকর্ডটা প্রকাশ করলে আমরা বুঝতে পারব আমাদের অপরাধটা কোথায়। আমরা খন্দকার মোশতাককে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি কি-না। 

তিনি বলেন, তিন দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ বক্তব্য প্রকাশ ও অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করতে আমরা আজ একটি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছি। আশা করছি উনারা দ্রুত সময়ের মধ্যে সেটি পেয়ে যাবেন।

উল্লেখ্য, গত ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের অন্য মন্ত্রীদের পাশাপাশি তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী খুনি মোশতাকের অবদা‌নের কথা উল্লেখ করে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এমন অভিযোগ ওঠে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. সামাদ ছাড়াও সভায় উপস্থিত একাধিক সদস্য ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সভাপতির পর বক্তব্য দিতে এসে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানান প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মো. সামাদ।

সভায় উপস্থিতরা বলছেন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি তার বক্তব্যে মোশতাককে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। পরে অধ্যাপক সামাদ প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার জন্য উপাচার্যকে অনুরোধ করেন। পরে উপাচার্য বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করেন।

পরের দিন (১৮ এপ্রিল) খন্দকার মোশতাককে ‘শ্রদ্ধা’ জানানো অনিচ্ছাকৃত ভুল বলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন অধ্যাপক রহমত উল্লাহ। তবে ক্ষমা প্রার্থনা করেও রেহাই পাননি তিনি। এই অভিযোগে তাকে সব ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।

এইচআর/ওএফ