ঢাবির হলে অভিনব কায়দায় নির্যাতন
ধোঁয়া না ছেড়ে ঠোঁটেই সিগারেট শেষ করতে চাপ ছাত্রলীগের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ২০১৯-২০ সেশনের এক শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে একই হলের ২০১৮-১৯ সেশনের চারজন ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) গভীর রাতে হলের ২০১ (ক) নং কক্ষে নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটে।
বিজ্ঞাপন
নির্যাতনকারী হিসেবে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা হলেন- সমাজকল্যাণ বিভাগের শেখ শান্ত আলম, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ইমদাদুল হক বাঁধন, তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শাহাবুদ্দিন ইসলাম বিজয় এবং আইন বিভাগের নাহিদুল ইসলাম ফাগুন।
তারা সবাই বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী এবং হল ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্তর ‘ছোট ভাই’ হিসেবে পরিচিত। মেহেদী হাসান শান্ত বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের রাজনীতি করেন।
ঘটনার বর্ণনায় নির্যাতনকারীদের সেশনের একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর নাম আবু তালিব। সে অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র। আবু তালিব তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্তর সামনে ভিসি চত্বরের পাশে সিগারেট খেয়েছিল বলে শোনা যাচ্ছে। এটাই তার ‘অপরাধ’। এর শাস্তি হিসেবে তাকে বঙ্গবন্ধু হলের ২০১ (ক) নং রুমে শান্ত, বাঁধন, বিজয় ও ফাগুন সিগারেটে আগুন ধরিয়ে মুখে দিতে বলে। আবু তালিব তা করতে না চাইলে একাধিকবার তাকে স্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত করা হয়। পরে ধোঁয়া না ছেড়ে সিগারেট খেতে চাপ দেওয়া হয়। এ সময় তারা আবু তালিবের বাবা-মা তুলে গালিগালাজ করতে থাকে এবং তাকে হল ছেড়ে চলে যেতে বলে।
তৃতীয় বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থী গেস্টরুমে উপস্থিত থেকে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আরো জানান, আবু তালিবকে এই চারজন সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করেছে। এছাড়াও প্রোগ্রামে উপস্থিত না থাকার অভিযোগে ১০-১২ জন শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গত তিনদিন ধরে ৩০১ (ক) নম্বর রুম তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছে। এতে ওই কক্ষের শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। যাদের পরীক্ষা আছে তারা বিভিন্ন হলে ঘুরে ঘুরে রাত কাটাচ্ছে।
হল ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী আবু তালিব এখন ভয়ে হলের বাইরে আছে। অভিযুক্তরা এই প্রথম কাউকে নির্যাতন করল তা নয়। তারা গেস্টরুমে নিয়মিতই নির্যাতন চালিয়ে থাকে। শিক্ষার্থীদের বাবা-মা তুলে গালি দেয়। তাদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে দ্বিতীয় বর্ষের ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে হল ছেড়ে দিয়েছে। ময়মনসিংহ অঞ্চল ছাড়া বাকি অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের বেছে বেছে নিয়মিত নির্যাতন করা হচ্ছে।
এদিকে ছাত্রলীগের একটি পক্ষের দাবি, ময়মনসিংহ অঞ্চলের বাইরের শিক্ষার্থীদের বেছে বেছে নির্যাতন করা হয় হলটিতে। ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে হল সভাপতি হিসেবে শান্ত দায়িত্ব পাওয়ার পর এই নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে। এছাড়া হলটিতে গেস্টরুমে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মানসিক নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্তরা বিষয়টি অস্বীকার করেন। তারা বলছেন, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। আবু তালিবকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। অভিযুক্ত শেখ শান্ত আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনার সময় আমি ছিলাম না। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কেউ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
আরেক অভিযুক্ত ইমদাদুল হক বাঁধন বলেন, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য। সে হলে আছে এবং ভালোভাবে আছে।
এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার কল করা হলেও রিসিভ করেননি হল ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্ত এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস। পরে তাদের ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়। এতেও সাড়া মেলেনি। ফলে তাদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. আকরাম হোসেন বলেন, আমি বিষয়টি জেনেছি। এটি খুবই দুঃখজনক। সবাই আমাদের ছাত্র। আমি হাউজ টিউটরদের বিষয়টি দেখতে বলছি এবং বিষয়টি তদন্ত করা হবে। কারো জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হলের গেস্টরুমে নির্যাতনের বিষয়টিও আমরা দেখছি।
এইচআর/এইচকে