ভারতের সিভিল এভিয়েশন এবং বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) অনুমোদন না নিয়েই ঢাকা-কলকাতা ও ঢাকা-দিল্লি রুটে ফ্লাইট চালুর ঘোষণা দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। আগামী ২২ তারিখ থেকে তাদের ফ্লাইট চালুর সংবাদে ইতোমধ্যে ভারতে যেতে ইচ্ছুক রোগী ও তাদের স্বজনরা টিকিট কেটেছেন। এখন ফ্লাইটের অনুমতি না থাকার সংবাদে বিড়ম্বনা ও বিভ্রান্তিতে পড়েছেন তারা। 

বিমানের টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত দেখে অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে ওঠে বেবিচক। আপাতত বাংলাদেশি যাত্রীদের ভারতের কোনো রুটের টিকিট না কেনার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। বেবিচক বলছে, বিমান অনুমোদন ছাড়া টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতারণা করেছে।

বেবিচকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ঢাকা পোস্টকে জানায়, ভারতের মেডিকেল ট্যুরিজমের বড় একটা অংশে বাংলাদেশের অবদান রয়েছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে সম্প্রতি ভারত এয়ার বাবল চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্লাইট পরিচালনা জন্য বেবিচককে প্রস্তাব দেয়। একইভাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মেডিকেল ভিসা ইস্যু করার বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায়। ভিসা ও ফ্লাইট চালুর বিষয়ে আলোচনা যখন চলছে তখনই বিমান বাংলাদেশ ফ্লাইট চালুর ঘোষণা দিল। তারা বেবিচক বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ধরনের অনুমতি নেয়নি। এমনকি আলোচনাও করেনি। ২২ তারিখ ফ্লাইট যাওয়ার কথা থাকলেও ২০ তারিখ পর্যন্ত ভিসা দেওয়ার বিষয়টিও চূড়ান্ত হয়নি।

ভারতের ফ্লাইট চালুর বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করে চিঠি দিয়েছিল। আমরাও ফ্লাইট চালানোর আগ্রহ দেখাই। ফ্লাইট চালুর বিষয়ে বেবিচকের মতামতগুলো একটি চিঠিতে তাদের জানিয়ে দিই। চিঠিতে আমরা জানাই, বেবিচকের মতামতের ওপর ভারতের সিভিল এভিয়েশনের কোনো মতামত আছে কি না তা জানানো হোক। তবে ভারত (২০ আগস্ট পর্যন্ত) তাদের মতামতটি জানায়নি।’

বিমানের টিকিট বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, বিমান ভুল করেছে। বিমান কোনোভাবেই ফ্লাইট ঘোষণা করতে পারে না। ভারত বাংলাদেশের ফ্লাইটগুলো চলাচল বন্ধ রেখেছে। ভারত যখন আমাদে ইতিবাচক সাড়া দেবে তখন বেবিচক এয়ারলাইন্সগুলোকে ফ্লাইট চালুর বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে। যেহেতু ভারত আমাদের এখনো কোনো চিঠি দেয়নি, তাই ফ্লাইট চলাচল করার কথা আসেই না। তারা (বিমান) এ ধরনের প্রজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে প্রতারিত করতে পারে না।

এ বিষয়ে জানতে বিমানের এমডি আবু সালেহ মোস্তফা কামালকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

ভারতের টিকিট কিনে হোটেল বুকিং করে বিপাকে যাত্রীরা
এদিকে বিমানের ১৮ আগস্টের ঘোষণায় ভারতে নিয়মিত চিকিৎসা নেন এমন অনেকেই পরদিন বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) ভারতের ফ্লাইটের টিকিট কাটেন। অনেকে ট্রাভেল এজেন্সির কাছে ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন। কেউ কেউ অনলাইনে হোটেলও বুকিং দিয়েছেন। এখন বিমানের অনুমতি না পাওয়ার সংবাদে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।

রাব্বি হাসান নামে একজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিমানের টিকিট বিক্রির ঘোষণা শুনে আমার বাবার জন্য চেন্নাইয়ের সিএমসি হাসপাতালে অনলাইনে অ্যাপয়েনমেন্ট নিই। বৃহস্পতিবার আমরা ফ্লাই ইজি ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্লেনের টিকিট কাটি। তাড়াহুড়ো করে ভিসার জন্য ছবি তুলে সব কাগজপত্র এজেন্সিতে জমাও দিই। অনলাইনে ৭ দিনের হোটেল বুকিং দিয়ে রেখেছিলাম। এখন সব টাকাই জলে যাচ্ছে। কবে যেতে পারব, আদৌ আগস্টে যাওয়া সম্ভব কি না বুঝতে পারছি না।

শামীমা হাসান নামে আরেকজন যাত্রী ঢাকা পোস্টকে  বলেন, স্টেপস ফ্লাই নামে ট্রাভেল অপারেটর থেকে আমি অনলাইনে পরিবারের ৭ জনের জন্য কলকাতার রিটার্ন টিকিট কেটে ফেলেছি। তবে আজ শুক্রবার তারা জানাল, টিকিটের তারিখ পরিবর্তন করতে হবে। সম্ভবত ফ্লাইটটি যাবে না। এখন নতুন আরেকটি সমস্যায় পড়লাম। আমরা কাল করোনা টেস্ট করানোর জন্যেও একটি বেসরকারি হাসপাতালে অ্যাপয়েনমেন্ট করে ফেলেছি। এখন কী করব বুঝতে পারছি না। 

গত বুধবার (১৮ আগস্ট) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ২২ আগস্ট থেকে ভারতের কলকাতা এবং দিল্লি রুটে ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণা দিয়ে টিকিট বিক্রি শুরু করে বিমান। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম-পিআর) তাহেরা খন্দকার জানান, ঢাকা-দিল্লি রুটে সপ্তাহে দুই দিন রোববার ও বুধবার এবং ঢাকা-কলকাতা রুটে সপ্তাহে তিন দিন রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। বিমানের যেকোনো সেলস্ অফিস, বিমান কল সেন্টার, অনুমোদিত ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে এ রুটের টিকিট সংগ্রহ করা যাবে বলে জানানো হয়।

এআর/এসএম/জেএস