ভারতের চাওয়াতে দেশটির সঙ্গে ‘এয়ার বাবল’ চুক্তির অধীনে সীমিত পরিসরে ফ্লাইট চালু করতে চায় বাংলাদেশ। ফ্লাইট চালুর বিষয়ে ঢাকার পক্ষ থেকে কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে, যাতে দিল্লির প্রাথমিক সম্মতি পাওয়া গেছে। তবে এখনও আনুষ্ঠানিক চিঠি পায়নি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

আশা করা হচ্ছে, চলতি সপ্তাহের মধ্যে দিল্লির চূড়ান্ত বার্তা আসবে। আর আগামী সপ্তাহ থেকে ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে ফ্লাইট চালু শুরু হবে। বেবিচক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ভারতের সিভিল এভিয়েশনকে একটা চিঠি দেওয়া হয়েছে। ফ্লাইট চালুর বিষয়ে আমরা কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। আমাদের প্রস্তাবের ওপর ভারতীয়রা কাজ করছে। তারা এখনও আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি। আমরা ওদের রেসপন্সের জন্য অপেক্ষা করছি। আশা করছি, ১৫ তারিখের পর খুব বেশি দেরি হবে না। ১৬ বা ১৭ তারিখের দিকে চালু হয়ে যাবে। যেহেতু প্রস্তাবটা ভারতের দিক থেকে এসেছে, ওরা এটা অবশ্যই না করবে না।’

দিল্লির আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ আগস্ট আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের পর ‘এয়ার বাবল’ চুক্তির অধীনে সীমিত পরিসরে ফ্লাইট চালুর বিষয়ে দেশটিকে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে বুধবার (১১ আগস্ট) থেকে ফ্লাইট চালুর বিষয়ে প্রস্তাব ছিল ঢাকার। কিন্তু এখনও সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি ভারত। তবে দু’একদিনের মধ্যে দিল্লির সিদ্ধান্তের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন ও কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় এখনও ঢাকার শর্তগুলো নিয়ে কাজ করছে। নানা দিক খতিয়ে দেখে খুব শিগগিরই চূড়ান্ত সম্মতি জানাবে দিল্লি। তবে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা উদ্বেগে রয়েছে ভারতীয় বিমান কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী ফ্লাইট চালুর বিষয়ে তার দেশের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভার্চুয়ালি একটি বৈঠক করেছেন।

ভারতের সঙ্গে ফ্লাইট চালুর বিষয়ে জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমরা তো ১১ আগস্ট থেকে ফ্লাইট চালু করতে চেয়েছিলাম। আমরা কিছু শর্ত দিয়ে তাদের চিঠি পাঠিয়েছি। কিছু শর্ত দিয়ে ওদের জানিয়েছি, তারা রাজি থাকলে শুরু করতে পারি। উত্তরটা এখনও পাইনি। বাবল এগ্রিমেন্ট হচ্ছে দুই দেশ একই শর্তে উড্ডয়ন করবে; সেক্ষেত্রে আমরা যেসব বিষয় চেয়েছি, ভারত যদি তাতে রাজি হয়, তাহলে শুরু করে দেব। যদি তাদের কোনো ভিন্ন মতামত থাকে তাহলে আমরা আবার আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করব। আমরা আসলে চাইনি। ভারতই চেয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্লাইট চালু করতে। আশা করি, ইতিবাচকভাবে ওরা জানাবে। আমার ধারণা আগামী দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে আমরা জেনে যাব।’

বেবিচক সূত্র বলছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার শর্ত ও ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ অনুযায়ী ফ্লাইট চালাতে পারবে। অন্যদিকে ভিস্তারা, স্পাইসজেট, ইন্ডিগো বা এয়ার ইন্ডিয়ার মতো যে ভারতীয় এয়ারলাইনগুলো রয়েছে সেগুলো বিশেষ ফ্লাইট চালাতে পারবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে চারটির মতো ফ্লাইট চলতে পারে। চিকিৎসাসহ শুধু জরুরি প্রয়োজন রয়েছে এমন ব্যক্তিরা চলাচলের সুযোগ পাবেন। এক্ষেত্রে স্থল সীমান্ত দিয়ে বর্তমানে যেভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশিরা ফিরছেন ফ্লাইটে ফেরার ক্ষেত্রে ঠিক একই নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।  

বিমান সংস্থাগুলোর ভাষ্য, করোনাভাইরাসের কারণে যেহেতু কোয়ারেন্টাইনসহ নতুন কিছু নিয়মের কথা বলা হচ্ছে, সেক্ষত্রে হুট করে না জানিয়ে হাতে সময় রেখে তাদের জানালে ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে তাদের। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা বা তথ্য আসেনি। যাত্রীরা কোন ক্যাটাগরিতে ভ্রমণ করতে পারবেন, কোয়ারেন্টাইনের যে ব্যাপারগুলো আছে বা যারা টিকা নিয়েছেন, তাদের জন্য কী নিয়ম হবে সেটা আমাদের জানা দরকার। এসব বিষয়ে আমরা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। নির্দেশনা না পেয়ে হুট করে ফ্লাইট চালু করা কঠিন হবে। তবে সিভিল এভিয়েশন যদি আমাদের কিছুটা সময় হাতে রেখে ফ্লাইট অপারেট করার অনুমতি দেয় আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে ফ্লাইট চালাতে পারব।’

গত ৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ভারত থেকে যারা ফ্লাইটে বাংলাদেশে আসবেন তাদের যদি করোনাভাইরাসের দুই ডোজ টিকা নেওয়া থাকে তবে তাদের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হবে। আর যারা টিকা নেয়নি তাদের ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন করতে হবে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উপ-মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার বলেন, ‘ফ্লাইট চালু হবে এটা শুনছি। তবে আমরা এখনও কোনো নোটিশ পাইনি। পেলে আমরা আপনাদের জানাবো।’

গত বছরের অক্টোবরে এয়ার বাবল চুক্তির অধীনে ভারতের সঙ্গে ফ্লাইট চালু করে বাংলাদেশ। তবে ভারতে করোনার সংক্রমণ ব্যাপক হারে বেড়ে গেলে চলতি বছরের ২৩ মার্চ থেকে আকাশপথে চলাচল বন্ধ করে দেয় ভারত। বাংলাদেশও করোনার বিস্তার ঠেকাতে ৫ জুলাই ভারতসহ ৮টি দেশের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। বর্তমানে ভারতের করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে গত ১৪ জুলাই ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন থেকে এয়ার বাবল চুক্তির অধীনে ফ্লাইট চালুর অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়।

এনআই/এনএফ