চাকরি স্থায়ীকরণ, বেতন বৃদ্ধি, পদোন্নতি ও জ্যেষ্ঠতার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পে-গ্রুপ ৩(২)- এর অধিকার বঞ্চিত কর্মীরা।

রোববার (১৪ জুলাই) বিমানের বলাকা কার্যালয়ে বিক্ষোভের পর বিমান শ্রমিক লীগের (সিবিএ) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে স্মারকলিপি দেন তারা।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘আমরা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পে-গ্রুপ ৩(২)- এর অধিকার বঞ্চিত কর্মী। আমরা কর্মপরিবেশ ও অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে শ্রমিক লীগে যোগদান করেছি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। মানসিক উৎকণ্ঠামুক্ত কর্মপরিবেশ তৈরি করা একটি আন্তর্জাতিক নির্দেশনা, যা বিমান পরিচালনার জন্য অত্যাবশ্যক।’

শ্রম আইন ২০০৬-এ উল্লেখ আছে– ‘কোনো শ্রমিককে অস্থায়ী শ্রমিক বলা হইবে, যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে তাহার নিয়োগ এমন কোনো কাজের জন্য হয়, যাহা একান্তভাবে অস্থায়ী ধরনের এবং যাহা সীমিত সময়ের মধ্যে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, বিমানের বেতন বিভাগ ৩(২)- কোনো অস্থায়ী পদ নয় এবং আমরা বিমানের কোনো প্রকল্পের আওতাধীন নই। আমাদের নিয়োগের আগে ও পরে একই পদে স্থায়ী নিয়োগ হয়েছে। সুতরাং এমন গুরুত্বপূর্ণ কর্মক্ষেত্রে স্থায়ী পদে কর্মীদের অস্থায়ী (ক্যাজুয়াল/চুক্তিভিত্তিক) অবস্থায় রাখা এক ধরনের প্রহসন; যা সুষ্ঠু কর্মপরিবেশকে বিনষ্ট করছে এবং কর্মীদের মানসিক উৎকণ্ঠাকে বেগবান করছে।

বিমান শ্রমিক লীগ (সিবিএ)-এর অতীত ইতিহাস জানান দেয়, আমাদের মতোই অনেক কর্মী শ্রমিক নেতাদের বলিষ্ঠ ভূমিকায় তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পেয়েছে কিন্তু আমরা ৩(২) পদে কর্মরত বেতন বিভাগের ২৩৪ জন কর্মী এখনো আমাদের দাবিগুলোর বাস্তবায়ন পাইনি।

স্মারকলিপিতে শ্রম আইন মেনে তাদের প্রধান তিনটি দাবি হিসেবে চাকরি স্থায়ীকরণ, বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট), পদোন্নতি ও জ্যেষ্ঠতা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, ‘আমরা বিশ্বাস করি শ্রমিক নেতাদের মাধ্যমে এ যৌক্তিক দাবিগুলো ম্যানেজমেন্টের নিকট থেকে দ্রুত আদায় করা আহামরি কিছুই না। কিন্তু বারবার মৌখিক আশ্বাস পেলেও দীর্ঘ আট বছরে পাইনি এর কোনো স্থায়ী সমাধান। যদি আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে আমাদের উপরের দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে আমরা ১৬তম দিন থেকে লাগাতার কর্মবিরতি ও অনশনের মতো কঠোর আন্দোলনে যাব। এর সম্পূর্ণ দায়ভার বিমান শ্রমিক লীগ (সিবিএ)-কেই বহন করতে হবে।

বিমানের এ পদে কর্মরত একজন কর্মী জানান, বিমানে ৩(২) একটি স্থায়ী পদ, এই একই পদে ২০১৬ সালে ২৫ জন ক্যাজুয়াল ভিত্তিতে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়, যার সার্কুলার কোনো জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বিএটিসি। বিমান যেহেতু একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, এর নিয়োগ সবসময় জাতীয় দৈনিকে সার্কুলার প্রকাশের মাধ্যমে হয়ে থাকে, কিন্তু ওই নিয়োগই ব্যতিক্রম। তারপরও বিমান তাদের আত্তীকরণ করে নেয় এবং প্রমোশন দিয়ে পে গ্রুপ-৪ এ পদোন্নতি দেয়। অথচ ওই একই পদে জাতীয় পত্রিকায় সার্কুলার প্রকাশের মাধ্যমে এবং যথাযথ কার্যক্রম পালনের মাধ্যমে ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৯ সালে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে নিয়োগপ্রাপ্ত হয় প্রায় ৪০০ জন কর্মী (বর্তমানে ২৩৪ জন কর্মরত)।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিমান ম্যানেজমেন্ট তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন করছে না। যা শ্রমিকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে, যা আজকের আন্দোলনের বহিঃপ্রকাশ। তাদের এই বৈষম্য আরও স্পষ্টত হয় যখন ২০২২ ও ২০২৪ সালে একই পদে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের আত্তীকরণ করার চুক্তি ও ইনক্রিমেন্ট প্রদান করা হয়। এ ধরনের বৈষম্য তাদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ সঞ্চার করে, যা ধীরে ধীরে তাদের কর্মবিরতি-অনশনসহ অন্যান্য আরও কার্যক্রম গ্রহণে বাধ্য করছে। একই প্রতিষ্ঠান একই পদে শূন্যপদ থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের কর্মীদের মানসিক ও সামাজিক বিপর্যস্ত করে তুলছে। যা বিমানের মতো একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে অনাকাঙ্ক্ষিত।

এআর/এসএসএইচ