সংগৃহীত

যাত্রী চাহিদা ও প্রবাসী কর্মীদের কথা বিবেচনা করে মালয়েশিয়া রুটে ফ্লাইট বাড়িয়েছে দেশীয় দুই এয়ারলাইন্স। একই সঙ্গে আবেদনের ভিত্তিতে কম্বোডিয়া অ্যাংকর এয়ারকে এ রুটে চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রবাসী কর্মীদের (সরকারিভাবে মালয়েশিয়ায় ওয়ার্কার ভিসাপ্রাপ্ত) ৩১ মে তারিখের মধ্যে মালয়েশিয়া প্রবেশের বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে দেশটির সরকার। ১৬ মে পত্রিকায় জরুরি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিষয়টি জানায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। তবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অনেক প্রবাসীকর্মী এ কথা জানতেন না। মে মাসের ২০ তারিখের পর বিষয়টি জানাজানি হলে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার হিড়িক পড়ে। এতে ফ্লাইটের সংকট দেখা যায়। এ অবস্থায় অনেক প্রবাসীর মালয়েশিয়া যাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।

ঢাকার দোহারের প্রবাসী আখিরুল ইসলাম বলেন, আমি অনেক আগে ভিসা পেয়েছি। কিন্তু রিক্রুটিং এজেন্সি যাওয়ার তারিখ জানাচ্ছিল না। হঠাৎ ২৩ মে শুনলাম ৩১ তারিখের আগে ফিরতে হবে। খোঁজ নিয়ে দেখি ৪০ হাজার টাকার টিকিট নাকি এক লাখ টাকা। দাম কমবে এই আশায় অপেক্ষা করতে করতে আর টিকিট পেলাম না। এখন অন্য মাধ্যমে চেষ্টা করে যাচ্ছি।

জামালপুরের আয়ান আহমেদ অর্নব জানান, এজেন্সি প্রথমে জানিয়েছিল টিকিটের দাম এক লাখ টাকা। পরে বললো কোনো প্লেনে সিট নেই। এক লাখ ২২ হাজার টাকা রেখেছে টিকিটের দাম। হঠাৎ সিদ্ধান্ত শুনলাম ৩১ তারিখের পর আর সেখানে (মালয়েশিয়া) আমাদের ঢুকতে দেবে না, সবার যাওয়ার হিড়িক লেগেছে। তাই বাধ্য হয়ে বেশি দামে টিকিট কিনেছি।

বর্তমানে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, মালয়েশিয়ান এয়ারওয়েজ ও বাটিক এয়ার বাংলাদেশ থেকে সরাসরি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে নিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি অনেক প্রবাসী সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে সিঙ্গাপুর হয়ে এবং থাই এয়ারওয়েজে ব্যাংকক হয়ে মালয়েশিয়া যাচ্ছেন। তারপরও অনেকেই টিকিট খুঁজে পাচ্ছেন না।

এদিকে টিকিটের সংকট কাটাতে ফ্লাইট বাড়িয়েছে দেশীয় দুই এয়ারলাইন্স। আগে দুই এয়ারলাইন্স দৈনিক একটি ফ্লাইট পরিচালনা করত। বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এই রুটে দৈনিক তিনটি এবং ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স দৈনিক দুইটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মালয়েশিয়ার সিদ্ধান্তের কারণে প্রবাসীদের টিকিটের প্রচুর চাহিদা বেড়েছে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স প্রবাসীদের চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে ফ্লাইট সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। শুধু মালয়েশিয়া নয় প্রবাসীদের জরুরি প্রয়োজনে যে কোনো রুটের ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানো হবে।

বিমানের ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) আল মাসুদ খান ঢাকা পোস্টকে জানান, এই রুটে বিমান গত চার দিনে নিয়মিত ফ্লাইটের পাশাপাশি অতিরিক্ত ৭টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ৩১ মে পর্যন্ত অতিরিক্ত ফ্লাইট চলবে। ফ্লাইট সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিমান সর্বনিম্ন ভাড়ায় প্রবাসী ভাইদের মালয়েশিয়া পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

এদিকে টিকিটের চাহিদা বাড়ায় কম্বোডিয়ার সরকারি এয়ারলাইন্স কম্বোডিয়া অ্যাংকর এয়ারকে ঢাকা থেকে মালয়েশিয়া রুটে চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান সাংবাদিকদের বলেন, বিমান ফ্লাইট সংখ্যা বাড়িয়েছে। বুধবার মালয়েশিয়ার কিছু লোক ঢাকা থেকে মালয়েশিয়া রুটে এয়ার কম্বোডিয়ার একটি এয়ারক্রাফট দিয়ে চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চেয়েছিল। আমরা অনুমতি দিয়েছি। আমার মনে হয় এটা পর্যাপ্ত। বিমান যদি প্রবাসীদের ফেরার বাধ্যবাধকতার বিষয়টি আরও আগে জানত, তাহলে আগেভাগেই ব্যবস্থা নিতে পারত। বর্তমানে বিমানের হজ ফ্লাইট চলছে, তবুও আমরা প্রবাসীদের কুয়ালালামপুর নেওয়ার ব্যবস্থা করতে চেষ্টা করেছি।

গত ১৬ মে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জরুরি এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিল, ‘মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু অভিবাসী কর্মীদের জানানো যাচ্ছে যে, বর্তমান কোটার আওতায় মালয়েশিয়ান সরকার বাংলাদেশসহ ১৪টি কর্মী প্রেরণকারী দেশ থেকে চলতি বছরের ৩১ মের মধ্যে মালয়েশিয়া প্রবেশের বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। মালয়েশিয়ায় গমনেচ্ছু অভিবাসী কর্মীদের মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ই-ভিসা জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) বহির্গমন ছাড়পত্র এবং এয়ারলাইন্সের ভ্রমণ টিকিটসহ যাবতীয় ডকুমেন্টসের সঠিকতা যাচাই-বাছাইপূর্বক মালয়েশিয়ায় যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণের অনুরোধ করা যাচ্ছে।’

এআর/এমজে