১১ বছর পর আবারও বাংলাদেশে ব্যবসা করতে আগ্রহ দেখিয়েছে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ

বহু বছরের বঞ্চনা, জনম জনমের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে স্বাধীনতার দূত শুনিয়েছিলেন মুক্তির গান। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’। মুক্তির সেই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে পুনর্জন্ম হয়েছে একটি জাতির। রক্তবন্যা পেরিয়ে ধ্বংসস্তূপ থেকে শুরু হওয়া শাপমুক্তি পথের বাঁকে বাঁকে ছিল ষড়যন্ত্র আর চক্রান্ত। কিন্তু মুক্তিপাগল বাঙালিকে থামানো যায়নি, অমঙ্গলের বিষদাঁত ভেঙে ঘুরে দাঁড়িয়েছে নতুন সূর্য হাতে, ছড়িয়েছে নতুন আলো বিশ্বভুবনে। জীবনমান, অর্থনীতি, অবকাঠামোসহ বহু খাতে পেছনে ফেলেছে প্রতিবেশীদের। ঢাকা পোস্টের ধারাবাহিক উন্নয়নের গল্পগাথায় আজ থাকছে এভিয়েশন খাতের সার্বিক চিত্র…
 
‘বাংলাদেশ নিরাপদ নয়’— এমন অজুহাতে একসময় অনেক বিদেশি এয়ারলাইন্স কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। অনেকে আবার ব্যবসা শুরু করেও গুটিয়ে নেয়। তবে দিন বদলেছে। ‘অনিরাপদ’ দেশ এখন বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

বিশ্বে এয়ারলাইন্স ব্যবসায় লাভজনক দেশের তালিকায় রয়েছে এখন বাংলাদেশের নাম। অনেকে এখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

করোনার কারণে ফ্লাইট বন্ধ করে দেয় ‘ফ্লাই দুবাই’। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা আবার ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে

বাংলাদেশে দীর্ঘ ৩৪ বছর নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনার পর ২০০৯ সালে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেয়। তাদের ফ্লাইট বন্ধের কারণে ইউরোপ-আমেরিকায় যেতে ওই সময় কাতার এয়ারওয়েজ, এমিরেটস ও টার্কিশ এয়ারলাইন্সের ওপর ভরসা করতে হয় বাংলাদেশের যাত্রীদের। ১১ বছর পর ২০২০ সালে আবারও সেই বাংলাদেশে ব্যবসা করতে আগ্রহ দেখিয়েছে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। এরই মধ্যে নতুন করে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য তারা বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে আবেদন করেছে।

২০০৯ সালের পর বাংলাদেশের পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে পাল্টে গেছে। বাংলাদেশ এখন আগের চেয়ে অনেক নিরাপদ। দেশটির এভিয়েশন সেক্টর অনেক উন্নতি করেছে এবং উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এজন্য ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ দুই বছরের জন্য সিভিল এভিয়েশন অথরিটির কাছে রুট সাপোর্ট চাচ্ছে

ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ

স্বাধীনতার ৫০ বছরে পা রাখতে যাওয়া বাংলাদেশের কাছে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের পাঠানো চিঠিটাও ছিল অত্যন্ত গর্বের। ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর বাংলাদেশে পাঠানো ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘২০০৯ সালের পর বাংলাদেশের পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে পাল্টে গেছে। বাংলাদেশ এখন আগের চেয়ে অনেক নিরাপদ। দেশটির এভিয়েশন সেক্টর অনেক উন্নতি করেছে এবং উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এজন্য ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ দুই বছরের জন্য সিভিল এভিয়েশন অথরিটির কাছে রুট সাপোর্ট চাচ্ছে।’

বেবিচকের এক সিদ্ধান্তে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ রাখে ইতিহাদ এয়ারওয়েজ। দুই বছর পর তারা আবার ফিরে আসে

ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের আবেদন নিবিড়ভাবেই পর্যবেক্ষণ করছে বেবিচক।

২০১৮ সালে বেবিচকের একটি সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ রাখে ইতিহাদ এয়ারওয়েজ। দুই বছর পর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে আবারও ফ্লাইট চালু করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের এ প্রতিষ্ঠান। একই বছর বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয় দুবাইভিত্তিক এয়ারলাইন্স কোম্পানি ‘ফ্লাই দুবাই’। করোনার কারণে দীর্ঘদিন বাংলাদেশের বিমানবন্দর বন্ধ থাকার পর যখন খুলে দেওয়া হয় তখন আবারও অনুমতি নিয়ে ফ্লাইট চালু করে তারা।

বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে ব্যবসা করতে আগ্রহ দেখিয়েছে ইরাকের ইরাকি এয়ারওয়েজ, ইরানের ইরান এয়ার, ইন্দোনেশিয়ার গারুদা ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়ান এয়ার

এছাড়া বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে ব্যবসা করতে আগ্রহ দেখিয়েছে ইরাকের ইরাকি এয়ারওয়েজ, ইরানের ইরান এয়ার, ইন্দোনেশিয়ার গারুদা ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়ান এয়ার।

ইরানের ইরান এয়ার, ইন্দোনেশিয়ার গারুদা ইন্দোনেশিয়া, দ. কোরিয়ার কোরিয়ান এয়ারও আগ্রহ দেখাচ্ছে

আধিপত্য বিদেশিদের

বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতে বর্তমানে বেশি আধিপত্য বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর। বেবিচক বলছে, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাওয়া যাত্রীদের প্রায় ৭০ শতাংশই বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর সেবা নিচ্ছেন। বাংলাদেশ থেকে কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে যাত্রী পরিবহনে কাতার এয়ারওয়েজ সপ্তাহে ২১টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এছাড়া দুবাইয়ের এমিরেটস ১৪টি, টার্কিশ এয়ারলাইন্স সাতটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

প্রবৃদ্ধির একটা সুস্পষ্ট উদাহরণ আন্তর্জাতিক বিমান যোগাযোগ খাত। বাংলাদেশে এটি প্রতিফলিত হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রবাসী ও নিয়মিত বিদেশযাত্রীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এজন্য আমরাও ফ্লাইট বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি

এজাজ কাদরি, সেলস অ্যান্ড ট্রাফিক অফিসার, টার্কিশ এয়ারলাইন্স

বাংলাদেশে বর্তমানে মালিন্দো এয়ার, এয়ার এরাবিয়া, এয়ার এরাবিয়া-আবুধাবি, সৌদি এয়ারলাইন্স, ইতিহাদ, কাতার এয়ারওয়েজ, এমিরেটস, টার্কিশ এয়ারলাইন্স, গালফ এয়ার, কুয়েত এয়ারওয়েজ, স্পাইস জেট, ভিস্তারা, শ্রীলংকান এয়ারলাইন্স, সালাম এয়ার, ইন্ডিগো, মালদিভিয়ান, ফ্লাই দুবাই, মালয়েশিয়ান এয়ার, চায়না সাউদার্নসহ প্রায় ২৫টির বেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্স কোম্পানি ব্যবসা পরিচালনা করছে।

বাংলাদেশ থেকে কাতার এয়ারওয়েজ সপ্তাহে ২১টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে

টার্কিশ এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশের সেলস অ্যান্ড ট্রাফিক অফিসার এজাজ কাদরি ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রবৃদ্ধির একটা সুস্পষ্ট উদাহরণ আন্তর্জাতিক বিমান যোগাযোগ খাত। বাংলাদেশে এটি প্রতিফলিত হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রবাসী ও নিয়মিত বিদেশযাত্রীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এজন্য আমরাও ফ্লাইট বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি। বাড়ন্ত এ বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তিগত অবকাঠামোর উন্নয়নও জরুরি। এটা আমাদের বাড়ন্ত সম্ভাবনাকে ত্বরান্বিত করবে।

এআর/এসকেডি/এমএআর/এমএমজে