প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার অত্যাধুনিক থার্ড টার্মিনাল
বহু বছরের বঞ্চনা, জনম জনমের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে স্বাধীনতার দূত শুনিয়েছিলেন মুক্তির গান। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’। মুক্তির সেই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে পুনর্জন্ম হয়েছে একটি জাতির। রক্তবন্যা পেরিয়ে ধ্বংসস্তূপ থেকে শুরু হওয়া শাপমুক্তি পথের বাঁকে বাঁকে ছিল ষড়যন্ত্র আর চক্রান্ত। কিন্তু মুক্তিপাগল বাঙালিকে থামানো যায়নি, অমঙ্গলের বিষদাঁত ভেঙে ঘুরে দাঁড়িয়েছে নতুন সূর্য হাতে, ছড়িয়েছে নতুন আলো বিশ্বভুবনে। জীবনমান, অর্থনীতি, অবকাঠামোসহ বহু খাতে পেছনে ফেলেছে প্রতিবেশীদের। ঢাকা পোস্টের ধারাবাহিক উন্নয়নের গল্পগাথায় আজ থাকছে এভিয়েশন খাতের সার্বিক চিত্র…
স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করছে বাংলাদেশ। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে একটি চক্র। যদিও সব বাধা উপেক্ষা করে আবারও উন্নয়নের ধারায় ফিরেছে বাংলাদেশ। গত ১২ বছরে এ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আরও গতি পেয়েছে। প্রতিটি খাত ধরে উন্নয়নের রূপকল্প তৈরি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার হাত ধরেই অনেক অধরা স্বপ্ন রূপ নিয়েছে বাস্তবে।
বিজ্ঞাপন
একজন বিদেশি বাংলাদেশে পা রেখেই দেশটি সম্পর্কে ধারণা পান বিমানবন্দর দেখে। সেই বিমানবন্দর যদি অত্যাধুনিক আর দৃষ্টিনন্দন না হয় তাহলে কি চলে! এ ভাবনা থেকেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ হচ্ছে। এ টার্মিনাল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর শ্রেষ্ঠ পুরস্কার বলছেন এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা।
২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক। কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৩ সালের জুনে অত্যাধুনিক এ টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারবেন বাংলাদেশে আসা সব বিমানযাত্রী
অত্যাধুনিক এ টার্মিনাল নির্মাণে কাজ করছে স্যামসাং গ্রুপের কনস্ট্রাকশন ইউনিট স্যামসাং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ট্রেডিং (সিঅ্যান্ডটি) করপোরেশন। এর আগে প্রতিষ্ঠানটি দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা, কুয়ালালামপুরের পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার, তাইপে ১০১, সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের চার নম্বর টার্মিনাল নির্মাণ করেছে।
২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক। কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৩ সালের জুনে অত্যাধুনিক এ টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারবেন বাংলাদেশে আসা সব বিমানযাত্রী।
সম্প্রতি ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘টার্মিনালের নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আমাদের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী মার্চে প্রকল্পের ১১ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু ২২ মার্চ পর্যন্ত ১৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। অর্থাৎ কর্মপরিকল্পনার চেয়েও এগিয়ে আছি আমরা। আশা করছি, নির্ধারিত সময়েই নির্মাণকাজ শেষ হবে এবং তা যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।’
টার্মিনালের নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আমরা আশা করছি, নির্ধারিত সময়েই নির্মাণকাজ শেষ হবে এবং তা যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে
মো. মাহবুব আলী, প্রতিমন্ত্রী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের এ টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ রাখার অ্যাপ্রোন (প্লেন পার্ক করার জায়গা) থাকছে। টার্মিনালের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন দিকটি হচ্ছে এর অত্যাধুনিক ভবন। দুই লাখ ৩০ হাজার স্কয়ার মিটারের এ ভবনের ভেতরে থাকছে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য ও অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির ছোঁয়া।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, টার্মিনাল ভবনের ভেতরে মেট্রোরেল সংযোগ, সেলফ চেক-ইন, ই-গেট, স্ট্রেইট এসকেলেটর (সমতল লিফট), তিন ধরনের অত্যাধুনিক ব্যাগেজ বেল্ট, বেবি কেয়ার, চিলড্রেন প্লে এরিয়া, ফার্স্ট এইড, মুভি লাউঞ্জ, ফুড কোর্ট, ওয়াইফাই সুবিধা থাকছে। এছাড়া থাকছে ২৭টি ব্যাগেজ স্ক্যানিং মেশিন ও ১১টি বডি স্ক্যানার।
টার্মিনাল ভবনের ভেতরে মেট্রোরেল সংযোগ, সেলফ চেক-ইন, ই-গেট, স্ট্রেইট এসকেলেটর (সমতল লিফট), তিন ধরনের অত্যাধুনিক ব্যাগেজ বেল্ট, বেবি কেয়ার, চিলড্রেন প্লে এরিয়া, ফার্স্ট এইড, মুভি লাউঞ্জ, ফুড কোর্ট, ওয়াইফাই সুবিধা থাকছে। এছাড়া থাকছে ২৭টি ব্যাগেজ স্ক্যানিং মেশিন ও ১১টি বডি স্ক্যানার
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, নতুন টার্মিনালের সক্ষমতা থাকছে অনেক বেশি। বর্তমানে বিমানবন্দরে আমদানি ও রফতানির জন্য একটি কার্গো ভিলেজ থাকলেও তৃতীয় টার্মিনালের উত্তর পাশে আলাদা আমদানি-রফতানি কার্গো ভিলেজ ভবন নির্মাণ হবে।
এছাড়া থার্ড টার্মিনালে দুই লাখ ২৬ হাজার বর্গমিটারের তিন ফ্লোরবিশিষ্ট একটি মডার্ন প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন থাকবে। বর্তমানে বছরে ৬৫ লাখ যাত্রী বিমানবন্দরের ১ ও ২ নম্বর টার্মিনাল ব্যবহার করেন। তৃতীয় টার্মিনাল হলে এ সংখ্যা বেড়ে এক কোটি ২০ লাখে দাঁড়াবে।
তৃতীয় টার্মিনাল হবে স্বয়ংক্রিয়। এতে যাত্রী ও কার্গোর ধারণক্ষমতা অনেক বাড়বে। এ প্রকল্পের কাজ আমি ব্যক্তিগতভাবে তদারকি করছি
এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান, চেয়ারম্যান, বেবিচক
বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান এ বিষয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘তৃতীয় টার্মিনাল হবে স্বয়ংক্রিয়। এতে যাত্রী ও কার্গোর ধারণক্ষমতা অনেক বাড়বে। এ প্রকল্পের কাজ আমি ব্যক্তিগতভাবে তদারকি করছি।’
‘করোনাকালেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্মাণকাজ চলেছে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ হবে’— বলেন মফিদুর রহমান।
শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পটির নির্মাণকাজে অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। এর ব্যয় প্রথমে ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে প্রকল্পের ব্যয় সাত হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়ানো হয়।
এআর/এসকেডি/এমএআর/এমএমজে