সড়কপথের দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি দূর করেছে সহজলভ্য আকাশপথ

বহু বছরের বঞ্চনা, জনম জনমের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে স্বাধীনতার দূত শুনিয়েছিলেন মুক্তির গান। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’। মুক্তির সেই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে পুনর্জন্ম হয়েছে একটি জাতির। রক্তবন্যা পেরিয়ে ধ্বংসস্তূপ থেকে শুরু হওয়া শাপমুক্তি পথের বাঁকে বাঁকে ছিল ষড়যন্ত্র আর চক্রান্ত। কিন্তু মুক্তিপাগল বাঙালিকে থামানো যায়নি, অমঙ্গলের বিষদাঁত ভেঙে ঘুরে দাঁড়িয়েছে নতুন সূর্য হাতে, ছড়িয়েছে নতুন আলো বিশ্বভুবনে। জীবনমান, অর্থনীতি, অবকাঠামোসহ বহু খাতে পেছনে ফেলেছে প্রতিবেশীদের। ঢাকা পোস্টের ধারাবাহিক উন্নয়নের গল্পগাথায় আজ থাকছে এভিয়েশন খাতের সার্বিক চিত্র…

৪০ মিনিটে ঢাকা থেকে রংপুর পৌঁছানো— এমনটি কল্পনাই করা যেত না একসময়। সেই কল্পনা আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। শুধু রংপুর নয়, ঢাকা থেকে এখন যেকোনো বিভাগীয় শহরে যাওয়া-আসা সময়ের ব্যাপারমাত্র। আকাশপথে যোগাযোগ সহজলভ্য হওয়ায় দীর্ঘ ভ্রমণের ভোগান্তি কমানো সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের বীজ বপন করেছিলেন। বর্তমানে আটটি বিমানবন্দর রয়েছে বাংলাদেশে। ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম ও সিলেটের বিমানবন্দরকে করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের। এমনকি কক্সবাজারেও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা চলছে। এছাড়া রাজশাহী, বরিশাল, সৈয়দপুর ও যশোর বিমানবন্দর এখনও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের জন্য ব্যবহার হচ্ছে।

ঈদযাত্রা বিষাদে রূপ নেয় যানজট, মুক্তি দেয় আকাশপথ

তেজগাঁও থেকে কুর্মিটোলার শাহজালাল বিমানবন্দর

স্বাধীনতার পর থেকেই ঢাকার মিরপুর ও তেজগাঁওয়ের মধ্যবর্তী স্থানে ছিল বাংলাদেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এ বিমানবন্দর দিয়েই আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা হতো। ১৯৮১ সালে অত্যাধুনিক দুই টার্মিনালবিশিষ্ট বিমানবন্দর নির্মিত হয় কুর্মিটোলায়। প্রথমে এর নাম ছিল জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। পরে নাম বদলে রাখা হয় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বর্তমান সরকার বিমানবন্দরটি আরও সম্প্রসারিত ও অত্যাধুনিক করতে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ করছে। নতুন এ টার্মিনাল বিশ্বের অত্যাধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে একটি হবে।

বর্তমানে আটটি বিমানবন্দর রয়েছে বাংলাদেশে। ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম ও সিলেটের বিমানবন্দরকে করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের। এমনকি কক্সবাজারেও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা চলছে। এছাড়া রাজশাহী, বরিশাল, সৈয়দপুর ও যশোর বিমানবন্দর এখনও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের জন্য ব্যবহার হচ্ছে

বর্তমানে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে কোনো ফ্লাইট ওঠা-নামা করে না। এটি এখন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বাশার ঘাঁটির অংশ। মাঝেমধ্যে বিমান বাহিনী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি হেলিকপ্টার ওঠা-নামা করে এখানে।

চট্টগ্রাম ও সিলেটে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

১৯৭২ সাল থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলের জন্য ব্যবহার হচ্ছিল চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর। ১৯৯০ সালের পর এটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৮ সালে বিমানবন্দরটিকে আরও বর্ধিত ও অত্যাধুনিক করে তৎকালীন সরকার। বর্তমানে এ বিমানবন্দর দিয়ে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি, দুবাই, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, ভারতের চেন্নাই, ওমানের মাস্কাটে ফ্লাইট পরিচালনা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে কক্সবাজার। এখানে নামবে বিদেশি ফ্লাইট। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলে বিদেশি পর্যটকরা সরাসরি কক্সবাজারে যেতে পারবেন

১৯৪৪-৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তৈরি হয় সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দর। স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে এটি। ১৯৮৬ সালে ফের চালু হয়। তখন অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চলাচলের জন্য বিমানবন্দরটি ব্যবহার হতো। ২০০২ সালে এটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে তৈরি করা হয়। বর্তমানে এ বিমানবন্দর দিয়ে অভ্যন্তরীণ রুটে ঢাকা-চট্টগ্রাম, আন্তর্জাতিক রুটে ওমান, লন্ডন ও ম্যানচেস্টারে ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের অপেক্ষায় যাত্রীরা

আন্তর্জাতিকের কাতারে যাচ্ছে কক্সবাজার বিমানবন্দর

১৯৫৬ সালে তৈরি করা কক্সবাজার বিমানবন্দরটি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশ স্বাধীনের পর বিমানবন্দরটি মেরামত করে ফ্লাইট চালু করে তৎকালীন সরকার। বর্তমানে এটি ব্যবহার করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ও নভোএয়ার। প্রতিদিন ১০টি ফ্লাইটে ৮০০ থেকে এক হাজার যাত্রী ঢাকা-কক্সবাজার যাতায়াত করছেন।

এদিকে শিগগিরই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে কক্সবাজার। এখানে নামবে বিদেশি ফ্লাইট। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলে বিদেশি পর্যটকরা সরাসরি কক্সবাজারে যেতে পারবেন।

কক্সবাজার পর্যটকদের পছন্দের জায়গা। বিদেশিরা যাতে বাংলাদেশে এসেই সরাসরি কক্সবাজারের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন সেজন্য এটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরের কাজ চলছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ হচ্ছে

মো. মাহবুব আলী, প্রতিমন্ত্রী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এ বিষয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, কক্সবাজার পর্যটকদের পছন্দের জায়গা। বিদেশিরা যাতে বাংলাদেশে এসেই সরাসরি কক্সবাজারের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন সেজন্য এটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরের কাজ চলছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ হচ্ছে।

চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর

সাড়ে ৩ লাখ যাত্রীর পা পড়েছে বরিশাল বিমানবন্দরে

যাত্রীদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ১৯৯৫ সালে চালু হয় বরিশাল বিমানবন্দর। প্রথমদিকে বিমানবন্দরটিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও বেসরকারি অ্যারো বেঙ্গল এয়ারলাইন্স নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করত। বরিশালসহ আশপাশের জেলার যাত্রীদের দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি ২০০৭ সালে সাইক্লোন সিডরের আঘাতের পর ত্রাণসামগ্রী আনা-নেওয়ার জন্য ব্যবহার হয় এ বিমানবন্দর। বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ও নভোএয়ার এখানে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করে। ১৯৯৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন লাখ যাত্রী এ বিমানবন্দর ব্যবহার করেছেন।
 
এছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশে নির্মিত সৈয়দপুর, যশোর, রাজশাহী বিমানবন্দর ব্যবহার করে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ অল্প সময়ের মধ্যে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছেন। স্বাধীনতার ৫০ বছরের সুবর্ণজয়ন্তীতে সচল ও সহজলভ্য আকাশপথ দেশের অন্যতম বড় অর্জন বলে মনে করেন এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা। 
 
এআর/এসকেডি/এমএআর/এমএমজে