‘এয়ারবাসে’র উড়োজাহাজ কিনলে বিমানের খরচ বাড়বে, ইঙ্গিত বোয়িংয়ের
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এয়ারবাস ব্র্যান্ডের ১০টি এয়ারক্রাফট কেনার ঘোষণা দেওয়ার পর বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো উপস্থিত হয়েছেন আন্তর্জাতিক এয়ারক্রাফট প্রস্তুতকারী কোম্পানি বোয়িংয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বুধবার (১০ মে) বোয়িংয়ের পক্ষ থেকে রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে বাংলাদেশের এয়ারলাইন্সগুলোর প্রতিনিধি, এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এবং সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার এভিয়েশন সেক্টরের বিভিন্ন দিক নিয়ে নিজেদের পর্যক্ষেণ তুলে ধরে বোয়িং।
এসময় বোয়িং বোঝানোর চেষ্টা করে, যদি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তাদের বহরে এয়ারবাস থেকে উড়োজাহাজ কেনে তাহলে তাদের খরচ অনেক বেড়ে যাবে।
আরও পড়ুন >> বিমানের বহরে ১০ এয়ারবাস যুক্ত হতে কত দিন লাগবে?
এসময় বোয়িংয়ের এশিয়া প্যাসিফিক ও ভারতের কমার্শিয়াল মার্কেটিং ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডেভ শাল্টে বলেন, বিমান যদি বর্তমানে নতুন কোনো ব্র্যান্ডের (মূলত এয়ারবাস) এয়ারক্রাফট কেনে তাহলে তাদের খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। বর্তমানে বিমানের বহরে বোয়িংয়ের আধিক্য থাকায় বিমানের এক সেট টেকনিক্যাল টিম ও একটি পাইলট টিমে কাজ চলছে। যদি তারা নতুন ব্র্যান্ডের এয়ারক্রাফট নেয় সেক্ষেত্রে তাদের দুই সেট টেকনিক্যাল টিম, দুই সেট পাইলট, দুই সেট ট্রেনিং টিম, দুই সেট সিমুলেটর লাগবে। এতে বিমানের খরচ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে।
ডেভ শাল্টে সরাসরি এয়ারবাসের কথা না বললেও তিনি তার পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে এয়ারবাসের উদাহরণ টেনে আনেন।
তিনি জানান, বিমানের বহরে যদি ১০টি বোয়িং ৭৮৭ থাকে তাহলে যত টাকা খরচ হবে, বহরে ৫টি বোয়িং ৭৮৭ এবং ৫টি এয়ারবাস এ-৩৫০ থাকলে খরচ তার চেয়ে অনেক বেশি হয়ে যাবে। তার হিসাবে ৬৪০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে। যে টাকা দিয়ে প্রায় ২১০০ ব্র্যান্ড নিউ কার কেনা সম্ভব!
বোয়িং নাকি এয়ারবাস? কোনটি সেরা এয়ারক্রাফট? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই বোয়িং সেরা।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারবাস কেনার ঘোষণার পরই কেন বোয়িং বাংলাদেশে সংবাদ সম্মেলন করল? তারা কি বাংলাদেশের মার্কেট হারাচ্ছে বলে মনে করছে?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোয়িংয়ের নর্থ ইস্ট এশিয়া কমার্শিয়াল এয়ারপ্লেন বিভাগের রিজিয়নাল ডিরেক্টর (কমিউনিকেশন) কেভিন ইও বলেন, বাংলাদেশের এভিয়েশন সেক্টর অপার সম্ভাবনাময় একটি সেক্টর। আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করছি। এছাড়া আমরা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বিমানবন্দরের ক্যাটাগরি আপগ্রেডেশনে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। এই সম্পর্ক আরও সমৃদ্ধ করতেই বোয়িং আজ সংবাদ সম্মেলন করতে এসেছে।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে বোয়িং জানায়, বোয়িংয়ের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০৩২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বার্ষিক জিডিপি ৫ শতাংশের বেশি হারে বৃদ্ধি পাবে, যা বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড়ের দ্বিগুণেরও বেশি। পাশাপাশি বিমান ভ্রমণের বার্ষিক বৃদ্ধির হার হবে ৮.৫ শতাংশ।
গত বছর থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শিথিল করায় বাংলাদেশের সক্ষমতা বছরে ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য এবং ভারতে আঞ্চলিক ট্রাফিক বিবেচনায়, আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশের বিমান ভ্রমণ দ্বিগুণ হবে বলে আশা করছে বোয়িং।
তাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, যাত্রী ভ্রমণ এবং এয়ার কার্গোর জোরালো চাহিদা মেটাতে, দক্ষিণ এশিয়ার বাহক বা ক্যারিয়ারদের আগামী ২০ বছরে ২০০০টির বেশি নতুন বাণিজ্যিক বিমানের প্রয়োজন হবে। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার বর্তমান ইন-সার্ভিস বিমানবহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা (৭০০টি) তিনগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পাবে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোর্ড সভায় এয়ারবাস কোম্পানি থেকে ১০টি এয়ারক্রাফট কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এআর/জেডএস