দেশের এভিয়েশন ও পর্যটন খাতে কর্মরত সাংবাদিকদের একমাত্র সংগঠন এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশ (এটিজেএফবি) গৌরবের সঙ্গে প্রতিষ্ঠার এক দশক পার করেছে।

শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে হয় ১০ বছর পূর্তির উৎসব। দেশের এভিয়েশন ও পর্যটন খাতে সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তিদের মিলনমেলায় উৎসবের রঙে রঙিন হয় এই আয়োজন।

প্রতিষ্ঠার গৌরবময় ১০ বছর পূর্তির উৎসব আয়োজনের এ আনন্দঘন মুহূর্তে এভিয়েশন ও পর্যটন খাতে ১৫ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে বিশেষ অবদান রাখার জন্য সম্মাননা স্মরক প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, গণমাধ্যম সমাজ ও রাষ্ট্রের দর্পণ। দর্পণে যেমন কোনো বস্তুর প্রকৃত রূপ ফুটে উঠে তেমনি সমকালীন বিশ্ব দরবারের চলমান গতিপ্রকৃতি, ঘটনাপ্রবাহ, জীবনচিত্র ও দিকনির্দেশনা পাওয়া যায় গণমাধ্যমে। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন, অগ্রগতি, সত্য, সুন্দর এবং ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠায় এর ভূমিকা অপরিসীম।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভের পর দেশের অন্যান্য অনেক শিল্পের মতো বাংলাদেশের এভিয়েশন ও পর্যটন শিল্পেরও যাত্রা শুরু হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে। দেশের পর্যটন শিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য এই মুহূর্তে পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চলছে। অভ্যন্তরীণ পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটক আকৃষ্ট করতে নতুন করে আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরির জন্য পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের সঙ্গে সহযোগিতা সম্প্রসারণ ও আন্তর্জাতিক পর্যটন সংস্থাসমূহের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় বৃদ্ধি, পর্যটন পণ্যের উন্নয়ন, ভিসা প্রদান পদ্ধতি সহজীকরণ, সৃজনশীল ও গতিশীল বিপণন এবং পর্যটন সেবার প্রচারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগের জন্য উদ্ভাবনী কর্মপরিকল্পনাসহ বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার জন্য আমরা উৎসাহ প্রদান করছি। সরকার ইতোমধ্যেই দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করেছে। দেশের এভিয়েশন ও পর্যটন শিল্পে এ সকল সময়োপযোগী ও সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে একদিকে যেমন দেশের অর্থনীতির প্রসার হবে, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত হবে তেমনি এতে বৃদ্ধি পাবে কর্মসংস্থান, অর্জিত হবে এসডিজি এবং শক্তিশালী হবে জাতীয় অর্থনীতি।

সংগঠনের সভাপতি তানজিম আনোয়ার বলেন, অদম্য সাহসী অগ্রযাত্রার এক দশক পার করল এটিজেএফবি। নানামুখী চ্যালেঞ্জ এবং চড়াই-উতরাই অতিক্রম করে ১১ বছরে পদার্পণ করেছে। এভিয়েশন ও পর্যটনের প্রসারে গণমাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকার প্রায়ই প্রশংসা করেন সংশ্লিষ্টরা। গণমাধ্যমকর্মীরাও কাজ করেন নিবিড়ভাবে। অসত্যের বিষবৃক্ষ মূলোৎপাটনে গঠনমূলক সংবাদ প্রচার করলেই শত্রুভাবাপন্ন হতে হয় রিপোর্টারদের। এরপরও সত্য ও সুন্দর প্রতিষ্ঠার অমোঘ সার্বজনীনতা থেকে পিছপা হন না এটিজেএফবি’র সদস্যরা।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক সবুজ বলেন, পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সময়োপযোগী আলোচনা, সভা, সেমিনারের মাধ্যমে আগামীর দিনগুলোতেও গণমাধ্যমকর্মীর দায়বদ্ধতা থেকে আমরা গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে চাই। এক দশকে যা সম্ভব হয়নি, সেটা হয়তো কয়েক বছরেই করা যাবে।

অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আলি কদর, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের, দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনসের প্রতিনিধি, ট্যুর অপারেট সংগঠনসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

২০১২ সালে বিশ্ব পর্যটন দিবসে (২৭ সেপ্টেম্বর) এটিজেএফবি’র যাত্রা শুরু। এভিয়েশন ও পর্যটন খাতের বিকাশে নিয়মিত অনুসন্ধানী ও গঠনমূলক সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে এটিজেএফবিকে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে এর একনিষ্ঠ সদস্যরা। বস্তুনিষ্ঠ ও গঠনমূলক সাংবাদিকতার বিকাশ, সদস্যদের কল্যাণ ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে এটিজেএফবি। এর অংশ হিসেবে সদস্যদের জন্য নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণ-কর্মশালা আয়োজন, ফেলোশিপ প্রদান, ইস্যুভিত্তিক সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, দেশ-বিদেশের এভিয়েশন ও পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়ে ভ্রমণ এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময় করে সংগঠনটি। সর্বোপরি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এভিয়েশেন ও পর্যটন খাতকে বিশ্ব দরবারে সঠিকভাবে তুলে ধরতে নিরলসভাবে কাজ করছে এর সদস্যরা।

এআর/এমজেইউ