একটি নতুন এয়ারলাইন্স এর আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে, বিশাল নীলাকাশে বিচরণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাংলাদেশের আকাশ পরিবহনে স্বপ্নের জাল বুনে প্রায় আট বছর পর দেশীয় এভিয়েশনে আশার প্রদীপ জ্বালাতে আসছে এয়ার অ্যাস্ট্রা। 

নতুনের আবির্ভাবে এভিয়েশনের একজন কর্মী হিসেবে অভিবাদন জানাই। আকাশ পরিবহনের ব্যবসা হয়ে উঠুক প্রতিযোগিতামূলক, যাত্রীবান্ধব। সেবা খাতের প্রতিষ্ঠান হিসেবে মূল প্রতিযোগিতা হয়ে উঠুক যাত্রী সেবায়। যাতে এ খাতে যাত্রীরাই ভোগ করুক উন্নত সেবা।

এয়ার অ্যাস্ট্রা বাংলাদেশের আকাশ পরিবহনে যাত্রীদের কাছে উন্নত সেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে এগিয়ে আসছে। বাংলাদেশে বেসরকারি এয়ারলাইন্স এর এগিয়ে চলার বয়স দু’যুগের কিছুটা বেশি। কিন্তু এই দীর্ঘ সময় অতিক্রম করার পর জাতীয় বিমান সংস্থার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে মাত্র দু’টি এয়ারলাইন্স : ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ার। 

বাংলাদেশ এভিয়েশন শিল্পে দিনদিন বন্ধ হওয়ার মিছিলটা কেমন জানি বেশি সুদৃঢ় হয়ে যাচ্ছিল। এই মিছিলটাকে ভেঙে দিতে এয়ার অ্যাস্ট্রার আগমনে ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ার এগিয়ে যাওয়ার মিছিলটাকে কিছুটা হলেও গতি সঞ্চার করাতে পারবে।

বারবার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই খাতে চাকরির বাজার হিসেবে একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতকে সঙ্গী করে শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা প্রবেশ করে। আর সেই অনিশ্চয়তার দোলাচলে নিজেকে গিনিপিগ বানিয়ে অন্য খাতে নতুন চাকরির সন্ধান করে। গত পঁচিশ বছরে জিএমজি, ইউনাইটেড, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের মতো এয়ারলাইন্স বাংলার আকাশ ছেড়ে বিশ্বের আকাশ দাপিয়ে বেড়ানো এয়ারলাইন্সগুলো অপারেশন শুরুর ১০ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে ইতিহাসের পাতায় স্থান নিয়ে বাংলাদেশ এভিয়েশনকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এ খাতে বিনিয়োগে অনুৎসাহী করে তুলেছে।

বিভিন্ন সময় সিভিল এভিয়েশন অথরিটি থেকে এনওসি নিয়েও অপারেশনে আসতে পারেনি এমন এয়ারলাইন্স এর সংখ্যাও কম নয়। যার মধ্যে সাউথ এশিয়া এয়ারওয়েজ, রূপসী বাংলা এয়ারলাইন্স, নেপচুন এয়ারলাইন্স, এপিক এয়ার। গত বছর এয়ার অ্যাস্ট্রার সঙ্গে ফ্লাই ঢাকা নামক আরো একটি এয়ারলাইন্স ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়ে এনওসি নিয়েছে রেগুলেটরি অথরিটি থেকে। অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশের এভিয়েশন, এগিয়ে চলার মিছিলকে আরো বেশি সুদৃঢ় দেখার জন্য।

স্বাধীনতা লাভের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বল্পতম জীবদ্দশায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বেশ কতগুলো 
কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন। তার মধ্যে জাতীয় বিমান সংস্থা গঠন একটি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় লাভের পর মাত্র ১৮ দিনের মাথায় ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি জাতীয় বিমান সংস্থা গঠন করা হয় এবং ঠিক এক মাস পর ৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়। সর্বাধিক অগ্রাধিকারের মধ্যে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন গঠন করেন ১৯৭৩ সালে। স্বাধীনতা লাভের পর বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের জীবদ্দশায় দেওয়া দিক নির্দেশনার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে চলছে উন্নয়নের সোপানে।

স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রম করলেও বিশ্বের ৫০টি দেশের সঙ্গে এয়ার সার্ভিস অ্যাগ্রিমেন্ট করতে পারেনি বাংলাদেশ। ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে দেখা যায় জাতীয় বিমান সংস্থা গত শতাব্দীর শেষের দিকে প্রায় ২২/২৩টি দেশে ২৮/২৯টি রুটে ফ্লাইট পরিচালনায় ছিল জাতীয় বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় বিমান পরিবহনে উন্নয়নের সোপান দেখতে পায়নি বাংলাদেশ। বর্তমানে ১৭/১৮টি দেশে ২২/২৩টি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করেছে আমাদের দেশের বিমান সংস্থাগুলো। যা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম।

প্রায় ১৩/১৪ মিলিয়ন বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজের সূত্রে কিংবা শিক্ষার বা চিকিৎসার কারণে, ভ্রমণের সূত্রে আকাশপথ ব্যবহার করছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক রুটের মার্কেট শেয়ারের প্রায় ৭০ শতাংশ বিদেশি এয়ারলাইন্স এর দখলে। সেখানে দেশীয় এয়ারলাইন্স এর কাছে মাত্র ত্রিশ শতাংশ, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারেনা। আরো বেশ কিছু বিদেশি এয়ারলাইন্স এর আগমনে অপেক্ষায় বাংলাদেশের এভিয়েশন। 

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এর প্রসার ও এয়ার অ্যাস্ট্রার আগমনের সংবাদে বাংলাদেশ এভিয়েশন যেন কিছুটা পজিটিভ মেরুকরণের গতিপথ পাওয়ার আশা করছে। ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক রুটের মার্কেট শেয়ার বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকছে বাংলাদেশি এয়ারলাইন্সের। দেশীয় এয়ারলাইন্সের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পসহ হোটেল ইন্ডাস্ট্রিও ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে।

বাংলাদেশের যাত্রীদের ওপর ভিত্তি করে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো ব্যবসায়িক পরিকল্পনা সাজায় অথচ বাংলাদেশি এয়ারলাইন্সগুলো সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না, তা সত্যিই ভাবনার বিষয়। বাংলাদেশিরা পৃথিবীর অনেক জাতি থেকেই অনেক বেশি দেশপ্রেমিক। কিন্তু সেই দেশাত্মবোধকে সম্মানের জায়গায় রেখে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোকে সেবা দিতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশি যাত্রীরা বিদেশি এয়ারলাইন্সের তুলনায় দেশীয় এয়ারলাইন্সে ভ্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। ফলে শুধু এয়ারলাইন্সের আয় বাড়বে না, দেশীয় জিডিপিতে অধিক অংশগ্রহণ দেখা যাবে। বেকারত্ব দূরীকরণে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। 

বাংলাদেশি প্রবাসীরা পৃথিবীর যেসব দেশে বসবাস করছেন সবখানেই বাংলাদেশি এয়ারলাইন্সগুলো ফ্লাইট পরিচালনা করবে, একজন এভিয়েশন কর্মী হিসেবে সব সময়ের প্রত্যাশা। জাতীয় বিমান সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি বিমান সংস্থা বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে, এই স্বপ্ন প্রতিনিয়ত দেখি একজন বেসরকারি এয়ারলাইন্সের কর্মী হিসেবে। নীতি নির্ধারকগণ সবক্ষেত্রে জাতীয় বিমান সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি এয়ারলাইন্স এর গুরুত্ব অনুধাবন করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ করে দিলে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

পরিচালন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করে এয়ারলাইন্সগুলোর স্বপ্নপূরণে সহযোগিতা করলে বাংলাদেশ এভিয়েশন এগিয়ে যাবে। বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে সহায়তা করবে।

সুবর্ণ সময়ের প্রত্যাশায় স্বপ্ন দেখি আর স্বপ্ন উড়াই বাংলাদেশ এভিয়েশনে।

মো. কামরুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স