হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানের বোয়িং-৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) রাতে দুই সদস্যের এই কমিটি করা হয়েছে।

কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন— বিমানের প্রধান প্রকৌশলী কায়সার জামান এবং বিমানের গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট মেইন্টেনেন্স বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক (বর্তমানে এই পদে যিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন)। তদন্ত কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ (জিএম-পিআর) তাহেরা খন্দকার ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। যদিও সন্ধ্যায় এই দুর্ঘটনার বিষয়ে মন্তব্য চাওয়া হলে তিনি সাড়া দেননি।

বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং-৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে উড্ডয়ন করে বিকেলে ৪ নম্বর বোর্ডিং ব্রিজে আসে। উড়োজাহাজ থেকে যাত্রী, ব্যাগেজ ও কার্গো অফ-লোডিং সম্পন্ন হওয়ার পর যথারীতি হ্যাংগারে নেওয়ার সময় বোর্ডিং ব্রিজের ক্যানোপি বিমানের দোরগোড়ার সংযোগস্থলের সংস্পর্শ হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময় বোর্ডিং ব্রিজে থাকা ঘর্ষণ প্রতিরোধক রাবারের সঙ্গে ঘর্ষণ লাগে।’

তিনি বলেন, ‘ঘর্ষণের বিষয়ে প্রকৌশলীরা তাৎক্ষণিকভাবে জানান যে, বোর্ডিং ব্রিজের ঘর্ষণ প্রতিরোধক রাবারটি ঠিক করা হয়েছে, বিমানের কোনো ক্ষতি হয়নি।’

সিডিউল অনুযায়ী শুক্রবার রাত আড়াইটায় বিমানটি রিয়াদের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার কথা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

তবে ঘটনার বিষয়ে বিমানবন্দরের দায়িত্বশীল সূত্র ঢাকা পোস্টকে জানায়, বিকেলে বিমানের ড্রিমলাইনার প্লেনটি ৪ নম্বর বোর্ডিং গেটে থেমে যাত্রী নামায়। বিমানটি ফাঁকা ছিল এবং আজ সেটির কোনো ফ্লাইটও ছিল না। সাধারণত ফ্লাইট না থাকলে বিমানের দরজা বন্ধ করে বোর্ডিং ব্রিজ থেকে একে আলাদা করা হয় এবং সেটাকে পুশব্যাক (পেছনে ধাক্কা দিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যাওয়া) করা হয়। ড্রিমলাইনারটিকে পার্কিং পজিশনে নেওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু বিমানের দরজা বন্ধ না করে এবং বোর্ডিং ব্রিজের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ছাড়াই এটিকে পুশব্যাক করা শুরু করে। সে সময় প্লেনের দরজার সঙ্গে বোর্ডিং ব্রিজের একটি টান লাগে। তখন বিমানবন্দরে হইচই শুরু হয়। বিমানের দরজা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানা যায়। 

জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বোর্ডিং ব্রিজ থেকে বিমান পৃথক করার সময় যেসব নিয়ম-কানুন মানতে হয়, সেগুলো মানা হয়নি। তারা প্লেনের দরজা ও বোর্ডিং ব্রিজের সংযোগ না খুলেই পুশব্যাক করেছে। এই ঘটনার বিষয়টি শুনে আমি নিজেই ঘটনাস্থলে যাই।

তিনি বলেন, বিমানবন্দরের চেকলিস্ট অনুযায়ী বিমানের দরজা যেভাবে বন্ধ করে ও বোর্ডিং ব্রিজ থেকে যেভাবে খুলে নেওয়া হয়, সেভাবে করা হয়নি। ঘটনাটি কীভাবে এবং কেন হয়েছে তা বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনের কাছে জানতে চেয়েছি। তারা আমাকে বিস্তারিত জানাবে। তবে বোর্ডিং ব্রিজের কোনো ক্ষতি হয়নি।

বিমান পুশব্যাক ও সিগন্যাল দেওয়ার জন্য বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং শাখা দায়িত্বপ্রাপ্ত। এ বিষয়ে বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা সাড়া দেননি। একাধিকবার কল দিলেও বক্তব্য মেলেনি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. আবু সালেহ্‌ মোস্তফা কামাল ও মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ (জিএম-পিআর) তাহেরা খন্দকারের।

গেল এপ্রিল মাসে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের দুটি উড়োজাহাজের ধাক্কা লেগে দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন বিমান জানায়, বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে আগে থেকেই বিমানের একটি বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাখা ছিল। পরে আরেকটি বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য হ্যাঙ্গারের দিকে নেওয়া হয়। হ্যাঙ্গারের ভেতরে প্রবেশ করানোর সময় ৭৩৭ উড়োজাহাজের সামনের অংশের সঙ্গে ভেতরে থাকা ৭৭৭ উড়োজাহাজের পেছনে অংশের ধাক্কা লাগে। এতে একটি ৭৩৭ উড়োজাহাজের সামনের অংশ (নোজ) এবং ৭৭৭ উড়োজাহাজের পেছনের অংশ (টেইল) ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ওই ঘটনায় বিমানের প্রিন্সিপাল প্রকৌশলীসহ পাঁচ জনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। এ কর্মকর্তারা হলেন— বিমানের প্রিন্সিপাল প্রকৌশলী মোহাম্মদ বদরুল ইসলাম, প্রকৌশলী মো. মাইনুল ইসলাম, সৈয়দ বাহাউল ইসলাম, সেলিম হোসেন খান এবং জিএসই অপারেটর মো. হাফিজুর রহমান।

এআর/এসএসএইচ