২০৫০ সালের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজ চলছে : কৃষিমন্ত্রী
২০৫০ সালে সম্ভাব্য ২০ কোটি মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য চালের উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) ‘বাংলাদেশে চালের উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ বৃদ্ধিকরণ- ডিআরপি’ শীর্ষক কৌশলপত্র উপস্থাপন ও মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য জানান। রাজধানীর হোটেলে সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে এ কৌশলপত্র প্রণয়ন করে।
বিজ্ঞাপন
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেশে একদিকে আবাদি জমি কমছে, বিপরীতে বাড়ছে জনসংখ্যা ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি। এই ক্রমহ্রাসমান জমি থেকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে চালের উৎপাদনশীলতা বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বাড়াতে হবে। সে লক্ষ্যে কাজ চলছে।
মন্ত্রী বলেন, ২০৫০ সালে মানুষের আয় আরও বাড়বে, ক্রয়ক্ষমতাও বাড়বে। খাবারের ভোগ ও চাহিদা বাড়বে। এ অবস্থায় খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। উন্নত ও নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পাশাপাশি ফলন ব্যবধান কমানোর মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য ধানের পুষ্টিমান উন্নয়ন ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের বিষয়েও জোর দেওয়া হচ্ছে।
উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করতে ব্রি প্রণীত ডিআরপি কৌশলপত্রটি গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে উল্লেখ করে ড. রাজ্জাক বলেন, আমাদের বিজ্ঞানীরা অত্যন্ত সুন্দর, কাঠামোগত ও সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। ডিআরপি মতো এ রকম কৌশলপত্র প্রণয়ন করতে আগে বিদেশি বিশেষজ্ঞ বা বিদেশি সংস্থার সহযোগিতা লাগত। এতে ব্যয়ও হতো অনেক। অথচ এটি আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছে যা একটি বড় সাফল্য।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ডিআরপিতে চালের উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ বৃদ্ধির যে পরিকল্পনা করা হয়েছে- তা স্বপ্ন নয় বরং অর্জনযোগ্য ও বাস্তবসম্মত। দেশের অস্তিত্বের জন্য, মানুষের জন্য এটি অপরিহার্য। উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম। আলোচক হিসেবে ছিলেন বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মো. বখতিয়ার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ ও ইরির বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. হোমনাথ ভান্ডারি।
এছাড়া বিশেষ অতিথি এফএওর বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি. সিম্পসনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শুনানো হয়। এ সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও অন্যান্য সংস্থাপ্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর। তিনি বলেন, ডাবলিং রাইস প্রোডাক্টিভিটি-ডিআরপি একটি সমন্বিত মডেল যেখানে ধানের ফলন প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাবে। অনাবাদি ও পতিত জমি চাষের আওতায় আসবে, ব্যাপক হারে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ঘটবে, ধানের গুণগতমান বৃদ্ধি পাবে। ধান ও চালের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করবে ও ধান উৎপাদনে ঝুঁকি কমাবে। ৪০ জন গবেষকের দুই বছরের নিরলস কাজের ফসল এটি।
উপস্থাপনায় জানানো হয়, ডিআরপি ৩০ বছরের জন্য চালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কৌশলপত্র। ২০৩০ সালের মধ্যে চালের চালের উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করতে কোথায় কোথায় বিনিয়োগ ও কী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে তা ডিআরপি কৌশলপত্রে বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
২০৫০ সালে চালের উৎপাদন ৬ কোটি ৮ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করার কথা এ বইয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। উন্নত জাত-প্রযুক্তি উদ্ভাবন, বিদ্যমান উৎপাদন গ্যাপ হ্রাস ও অনাবাদি জমিতে আবাদ বৃদ্ধিসহ সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে চালের উৎপাদন ২০৩০ সালে ৪ কোটি ৬৯ লাখ, ২০৪০ সালে ৫ কোটি ৪০ লাখ এবং ২০৫০ সালে ৬ কোটি ৮ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করা সম্ভব। বর্তমানে ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৮৭ লাখ মেট্রিক টন।
আরও বলা হয়, এ কর্মপরিকল্পনার ৭৫ শতাংশ বাস্তবায়ন সম্ভব হলে ২০৩০ সালে ৪২ লাখ, ২০৪০ সালে ৫৩ লাখ ও ২০৫০ সালে ৬৫ লাখ মেট্রিক টন চাল দেশে উদ্বৃত্ত থাকবে। এর ফলে যেকোনো দুর্যোগে বছরে ৪০ লাখ মেট্রিক টন পর্যন্ত চালের উৎপাদন কমলেও খাদ্যনিরাপত্তা অক্ষুণ্ণ থাকবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি-২ বা জিরো হাঙ্গার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৭১-৭২ সালে হেক্টরপ্রতি চালের গড় উৎপাদন ছিল ১ টনের কিছু বেশি। বর্তমানে হেক্টরপ্রতি চালের উৎপাদন গড়ে ৪ (চার) টনেরও বেশি।
একে/ওএফ