চট্টগ্রাম নগরীতে মোট ৪৯৫ প্রজাতির উদ্ভিদ রযেছে। যার মধ্যে ১৩ প্রজাতির উদ্ভিদ বিলুপ্তপ্রায় এবং সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতে হারিয়ে যাবে ১৩৭ এর বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ। 

চট্টগ্রাম শহরের উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা, বিপন্ন ও বিলুপ্তির পথে ধাবিত প্রজাতির ওপর করা 'ইফেক্টিভ ক্রিয়েশন অন হিউম্যান ওপেনিয়ন- ইকো' পরিচালিত গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে। 

মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন গবেষণা কর্মের প্রধান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ইকোর সাধারণ সম্পাদক ড. ওমর ফারুক রাসেল। 

তিনি বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় মোট ৪৯৫ প্রজাতির উদ্ভিদ রেকর্ড করা হযেছে। এরমধ্যে বড় বৃক্ষ ১৭৭ প্রজাতি, গুল্ম জাতীয় ৮৬, বীরৎ জাতীয় ১৭৯, লতা জাতীয় ৫৩ প্রজাতি পাওয়া গেছে। 

গবেষণা কর্মের প্রধান ওমর ফারুক রাসেল আরও বলেন, মোট প্রজাতির মধ্যে দেশীয় প্রজাতি ৩৫৪টি আর বিদেশি প্রজাতি ১৪১টি। ৩৬৬ প্রজাতি পাওয়া গেছে, যেগুলো ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া বিপন্ন প্রায় ১৩টি ও সংরক্ষণ করা না হলে ভবিষ্যতে  বিলুপ্ত হতে পারে এমন প্রজাতি পাওয়া গেছে ১৩৭ এর বেশি। এছাড়া এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়নি এমন প্রজাতির সংখ্যা ৩০ এর বেশি। 

তিনি আরও বলেন, আরও ব্যাপক আকারে গবেষণা করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি, এটি করা গেলে উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা আরও বাড়বে। 

গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এলাকায় ২০১ প্রজাতি, নগরীর ডিসি হিলে ১৩২, ওয়ার সিমিট্রিতে ৯১, টাইগারপাসে ২১০, মুরগিফার্ম ২৩৫, রেলওয়ে সেগুন বাগান এলাকায় ৪৯, কানন ধারা আবাসিক এলাকায় ১৩৫, গোলপাহাড় এলাকায় ১২৭, ডাকবাংলো পাহাড়ে ১০৬, ডানকান পাহাড়ে ১৮১, গোলাপ মিয়া পাহাড়ে ১৫৯, বাটালি হিল ২২৪, বায়েজিদ-ভাটিয়ারি লিংক রোডে ২১৬, জয় পাহাড়ে ২০৭, মতিঝর্ণা এলাকায় ১৯৯, মেরিন ড্রাইভে ৪৫ এবং ওমরগণি এমইএস কলেজ সংলগ্ন পাহাড়ে ১৩০ প্রজাতির উদ্ভিদ শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া সিআরবিতে ২২৩ প্রজাতির উদ্ভিদ শনাক্ত হয়েছে। যার মধ্যে বড় বৃক্ষ ৮৮, গুল্ম জাতীয় ৪১, বীরৎ জাতীয় ৭২, লতা জাতীয় ২২, ওষধি উদ্ভিদ ১৮৩, বিপন্ন প্রজাতির ৯, ভবিষ্যতে বিলুপ্ত ৬৬ ও শনাক্ত হয়নি এমন দুই প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। 

গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা বিপন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে হলদে বেত (Dypsis lutescens), নাটা সাইকাস (Cycas pactinata), শীতশাল (Dalbergia latifolia), গর্জন (Dipterocurpus alatus), লম্বু (Khaya anthotheca), শ্বেতচন্দন (Santalum album), অশোক (Saraca asoca), ঢাকিজাম (Syzygium firmum), দুধকুরুস (Wrightia arborea), বাকা গুলঞ্চ (Tinospora erispa), সোনাতলা। 

এছাড়া ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হতে পারে এমন উদ্ভিদের মধ্যে আছে— মেঞ্জিয়াম (Acacia mangium), হারগোজা (Acanthus ilicifolius ), টাইগার ফার্ন (Acrosticum aureum), কঞ্চি এলাচ (Alpinia conchigera), ছাতিম (Alstonia scholaris), বেত (Calamus tenuis), বড় ডুমুর (Ficus auriculata), যজ্ঞ ডুমুর (Ficus racemosa ), কুরুজ (Holarrhena pubescens), কুকুরা (Leea indica), পিটালি (Mallotus nudiflorus), হরিতকি (Terminalia chebula), স্বর্পগন্ধা (Rauvolfia tetraphylla), বকুল (Mimusops elengi), শিমুল( Bombax ceiba), পিতরাজ (Aphanamixis polystachya) এবং দুরন্ত (Duranta erecta)।

ড. ওমর ফারুক বলেন, পাহাড় কাটা, পাহাড়ে অপরিকল্পিত বসবাস ও স্থাপনা নির্মাণ যদি বন্ধ করা না হয় তাহলে গবেষণায় শনাক্তকরা ১৩ প্রজাতির বিপন্ন উদ্ভিদ এবং ৩৬৬ ঔষধীসহ ৪৯৫টি উদ্ভিদের অনেকগুলোই হারিয়ে যাবে। যা চট্টগ্রাম শহরের পরিবেশ বিনষ্ট করবে।

তিনি বলেন, পরিবেশ বিপর্যয় রোধে পাহাড় কাটা, পাহাড়ে অপরিকল্পিত বসবাস ও স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করতে করতে হবে। এছাড়া ভবিষ্যতের পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে এ ৪৯৫টি উদ্ভিদ প্রজাতি সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। 

তিনি বলেন, সংরক্ষণের জন্য সৌন্দর্যবর্ধনের নামে বিদেশি উদ্ভিদের পরিবর্তে দেশীয় ফলজ-বনজ ও ঔষধী উদ্ভিদ ব্যাপকহারে রোপণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া সড়ক-মহাসড়কের বিভাজনকে তিনস্তরে ঔষধী, দেশীয়, ফলজ গাছ রোপণের বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

বেসরকারি সংস্থা ইফেক্টিভ ক্রিয়েশন অন হিউম্যান ওপেইনিয়নের (ইকো) উদ্যোগে এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। গবেষণা দলে আরও ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খন্দকার রাজিউর রহমান, ইমাম হোসেন, সজীব রুদ্র, আরিফ হোসাইন, সনাতন চন্দ্র বর্মন, মো. মোস্তাকিম এবং ইকরামুল হাসান। এবছরের মার্চে গবেষণার কাজটি শুরু হয়েছিল।

কেএম/এসএম