দ্বিগুণ ভাড়া দিয়েও বিভিন্ন দেশে ফল ও সবজি রফতানি করতে পারছেন না রফতানিকারকেরা। করোনার কারণে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় তারা এ সমস্যায় পড়েছেন। এতে প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতির পাশাপাশি ক্রেতা হারানোর শংকা তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশে ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড এলাইড প্রোডাক্ট এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ২০১৫ সালের পর থেকে ফল ও সবজি রফতানির পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল। কিন্তু করোনার থাবায় তা আবার কমতে শুরু করেছে।

অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোট ফল ও সবজি রফতানি হয় ৪১ হাজার ৭৫০ টন, যার বাজার মূল্য ৮৩ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন ডলার। এক বছরের ব্যবধানে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫১ হাজার ৫০০ টনে দাঁড়ায়, যার বাজারমূল্য ১০০ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন ডলার। এভাবে প্রতিবছরই ধারাবাহিকভাবে রফতানির বাজার বড় হতে থাকে।

সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৬৪ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ফল ও সবজি রফতানি হয়। কিন্তু করোনার আঘাতে ২০২০-২১ অর্থবছরে রফতানি কমে ১১৯ মিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকে। এ হিসেবে প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ডলারের কম হয় রফতানি।

বাংলাদেশে ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড এলাইড প্রোডাক্ট এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ মুনসুর ঢাকা পোস্টকে বলেন, মূলত পরিবহন সমস্যার কারণে রফতানি কমে যাচ্ছে। আমাদের কিন্তু অর্ডার রয়েছে। কিন্তু দ্বিগুণ ভাড়া দিয়েও পরিবহন পাওয়া যাচ্ছে না। করোনার কারণে অধিকাংশ দেশেই ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় আমরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছি।

তিনি বলেন, সরকারের উদ্যোগে যদি পরিবহন ব্যবস্থা করা যেত অথবা কার্গো বিমান পরিচালনার ব্যবস্থা করা যেত তাহলে বড় অঙ্কের ফল ও সবজি রফতানি করা সম্ভব হতো। এরপরও যতটুকু সম্ভব হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে পণ্য পাঠাতে হচ্ছে।

ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে ফল ও সবজি রফতানিকারকেরা জানান, সরকারিভাবে কার্গো ব্যবস্থা থাকলে দেশে ফল, সবজি রফতানি আরও কয়েকগুণ বাড়ানো সম্ভব। করোনার মতো মহামারিতেও রফতানিতে ভাটা পরত না বরং রফতানির বাজার আরও বড় হতো।

সবজি রফতানিকারক ইকবাল হোসেন বলেন, রোজার ঈদের পরে আর কোনো সবজি রফতানি করতে পারিনি। অথচ এই সময় হলো সবচেয়ে পিক সময়। সবজির চাহিদা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে বেশি থাকে। কিন্তু আমরা সেসব বাজারে যেতে পারছি না। এতে আমাদের ক্রেতারা অন্য দেশের বিক্রেতাদের কাছ থেকে পণ্য নিচ্ছে। আমরা আর ওই ক্রেতাকে সহজে ধরতে পারব না।

পরামর্শ হিসেবে ফল ও সবজি রফতানিকারকেরা জানান, এ মুহূর্তে সরকারি পদক্ষেপ খুবই জরুরি। নইলে বড় ধরনের লোকসানে পড়বে সম্ভাবনাময় খাতটি। প্রতিবছরই রফতানির তালিকায় নতুন নতুন পণ্য যোগ হচ্ছে। এই মুহূর্তে যদি ক্রেতা হারিয়ে যায় তাহলে সেই ক্রেতাকে ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ বিভাগের রফতানি উইং জানায়, দেশে উৎপাদিত ৪৫ ধরনের বেশি সবজি ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়ে থাকে।

গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট সবজি রফতানি হয় ৫৮ হাজার ৬৭৬ টন। এক বছরের ব্যবধানে রফতানি কমে ২০১৯-২০ অর্থবছরে গিয়ে দাঁড়ায় ৫৪ হাজার ৮০০ টনে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫৫ হাজার ৮৪৪ টন সবজি রফতানি হয়। এ বছরে আলু রফতানির পরিমাণ বেশি হওয়ায় মোট রফতানির পরিমাণ কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ও কৃষিবিদ মো. আছাদুল্লাহ বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে কৃষি পণ্য রফতানিকারকদের। আমরা নিয়মিত অফিস করছি। পাশাপাশি রফতানি সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমগুলো অনলাইনে সম্পাদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া যেকোনো রফতানিকারক সব সময়ই পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা চাইলে পাবেন।

একে/এইচকে