২৮ ফসলের উৎপাদন ও চাহিদার তথ্যের সন্ধানে কৃষি মন্ত্রণালয়
প্রতিবছরই নিত্যপ্রয়োজনীয় একাধিক পণ্যের উৎপাদন আর চাহিদার তথ্যবিভ্রাটে বিপাকে পড়তে হচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সরকারকে। একাধিক পণ্যের চাহিদা আর উৎপাদনের পরিমাণের তথ্যে খুব বেশি ফারাক না থাকলেও বাজারে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। হু হু করে দাম বেড়ে যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের।
এছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় একাধিক পণ্যের বিষয়ে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে তথ্যের মিল পাওয়া যায় না। বাজার নিয়ন্ত্রণে খাদ্যপণ্য আমদানির সিদ্ধান্ত নিতেও বেশ হিমশিম খেতে হয়। সব মিলিয়ে হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয়। তবে খুব শিগগিরই এসব সমস্যার সমাধান হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
নিত্যপ্রয়োজনীয় ২৮টি বিশেষ ফসলের উৎপাদন ও চাহিদার প্রকৃত তথ্যের সন্ধানে মাঠে নামছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এসব ফসলের প্রকৃত চাহিদা, উৎপাদন ও সরবরাহের তথ্য তুলে নিয়ে আসবে এ মন্ত্রণালয়। এতে প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠবে নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব বিশেষ খাদ্যপণ্যের।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সর্বশেষ গত ২৫ জুলাই কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেসবাহুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় বলা হয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় ২৮টি ফসলের কী পরিমাণ প্রকৃত চাহিদা রয়েছে তা গবেষণা আকারে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) একটি পূর্ণাঙ্গ সমন্বিত প্রতিবেদন তৈরি করে কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। বিএআরসি’কে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা সহযোগিতা করবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূল কাজ হবে ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী এই ২৮টি ফসলের কতটুকু উৎপাদন প্রয়োজন এবং কী পরিমাণ উৎপাদন হচ্ছে তার সঠিক তথ্য তুলে নিয়ে আসা। পাশাপাশি প্রকৃত চাহিদার সঠিক তথ্য জানা। এতে চাহিদা অনুযায়ী ফসল উৎপাদন, সংরক্ষণ, সরবরাহ ও আমদানি বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ধান থেকে শুরু করে প্রায় সব ফসলের উৎপাদনের তথ্যে বলছি অনেক উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু বাজারে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে হয় চালের সংকট, না হয় বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। প্রতিমুহূর্তে বাড়ছে দাম। যদি আমরা অনেক উৎপাদনই করে থাকি তাহলে চালের সংকট কেন দেখা দিচ্ছে? তাহলে পণ্যটি যাচ্ছে কোথায়?
তিনি বলেন, আসলে আমাদের এখন দরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা ও উৎপাদনের প্রকৃত তথ্য জানা। মনে করুন, আমাদের ২৫ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজের চাহিদা। আমি উৎপাদনও করলাম ২৫ লাখ টন। তাহলে তো আমার ঘাটতি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বছর শেষে তো ঘাটতিতে বাজার গরম হয়ে যাচ্ছে।
তিনি জানান, আসলে প্রকৃত গবেষণার মাধ্যমে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। যা এবার করা হচ্ছে। আমরা চাচ্ছি বিশেষ এই ২৮টি ফসলের প্রকৃত তথ্য আমাদের কাছে থাকুক। আমাদের জানতে হবে চাহিদা কত, উৎপাদন কত? কতটুকু উৎপাদন বাড়াতে হবে, কতটুকু বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে অথবা উদ্বৃত্ত পণ্যের কী হবে, এসব বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে তাহলে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের এ পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন কৃষি অর্থনীতিবিদরা। তারা মনে করছেন, প্রকৃত তথ্য পাওয়া গেলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে যে সিন্ডিকেট রয়েছে তারা দুর্বল হয়ে যাবে। সরকারও তার অবস্থান স্পষ্ট বুঝতে পারবে। এটা খুবই সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিবিজনেস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের প্রফেসর ও কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। আমরা অনেক পণ্যের তথ্যে বলছি প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন ও সরবরাহ হচ্ছে, কিন্তু বাজারে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়।
তিনি বলেন, অনেক সময় তথ্যে ঘাটতির কারণে সঠিক সময়ে পণ্য আমদানিতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। সঠিক চিত্রটি পাওয়া গেলে একদিকে যেমন বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে, অপরদিকে নীতিনির্ধারকদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতেও সুবিধা হবে। পাশাপাশি যেসব পণ্যের ঘাটতি রয়েছে সেসব পণ্যের উৎপাদন বিষয়েও সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আছাদুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে জানান, ফসলের বিভিন্ন ক্যাটাগরি ভাগ করে ২৮টি ফসল নির্ধারণ করা হচ্ছে। যেমন ডাল ফসল, মশলা, তেল ফসল, খাদ্য ফসল, সবজি। মূলত নিত্যপ্রয়োজনীয় ফসলগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ২৮টি বিশেষ ফসলের চাহিদা নির্ধারণে। তালিকায় ধান, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, আলু, গম, ভুট্টা, বাদাম, সরিষা, টমেটো, কাঁচামরিচসহ বিভিন্ন ফসল রয়েছে।
একে/এইচকে