২০১৯ সালে পবিত্র ঈদুল আজহায় দেশজুড়ে ১ কোটি ৬ লাখ ১৪ হাজার পশু কোরবানি দেওয়া হয়। ২০২০ সালে কোরবানি দেওয়া পশুর সংখ্যা ছিল ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ২৬৩। যা চলতি বছর ৯০ লাখ ৯৩ হাজারে এসে দাঁড়ায়। অর্থাৎ দুই বছরের ব্যবধানে কোরবানি দেওয়া পশুর সংখ্যা কমেছে ১৫ লাখ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত দুই বছর ধরে ব্যবসা বাণিজ্য খারাপ যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে পশু কোরবানির ওপর। আগে যারা একাই একটি পশু কোরবানি দিতেন তারা এখন অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কোরবানি দেন। এ কারণে কোরবানি দেওয়া পশুর সংখ্যা কমছে।

এদিকে গত দুই বছর ধরে কোরবানির জন্যে প্রস্তুত করা মোট পশুর একটা বড় অংশ অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে। চলতি বছর ২৮ লাখের বেশি পশু অবিক্রীত থেকে গেছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, চলতি বছর কোরবানি দেওয়া পশুর মধ্যে ছাগলের সংখ্যা ছিল বেশি। কোরবানিতে জবাই করা পশুর সংখ্যায় এগিয়ে আছে ঢাকা বিভাগ।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতর জানায়, চলতি বছর সারাদেশে মোট ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি পশু কোরবানি হয়েছে। এর মধ্যে গরু ও মহিষের সংখ্যা ৪০ লাখ ৫৩ হাজার ৬৭৯টি। আর ছাগল ও ভেড়া কোরবানি হয়েছে ৫০ লাখ ৩৮ হাজার ৮৪৮টি। এছাড়া অন্যান্য পশু কোরবানি হয়েছে ৭১৫টি।

কোন বিভাগে কত কোরবানি

সবচেয়ে বেশি কোরবানি হয়েছে ঢাকা বিভাগে ২২ লাখ ৩৯ হাজার ২৫২টি। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ১৮ লাখ ৯৯ হাজার ৫১৮টি, রাজশাহীতে ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ১৪৫টি, খুলনায় ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৬০১টি, বরিশালে ৪ লাখ ৬১ হাজার ৯৭৯টি, সিলেটে চার লাখ আট হাজার ৯৪১টি, রংপুরে ১০ লাখ ৪৪ হাজার ৮৫৯টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯৪৭টি কোরবানির পশু জবাই হয়েছে।

কোন বছরে কত কোরবানি

২০১৭ সালে দেশজুড়ে ১ কোটি চার লাখ ২১ হাজার পশু কোরবানি দেওয়া হয়। এরপর ২০১৮ সালে ১ কোটি পাঁচ লাখ ৬৯ হাজার, ২০১৯ সালে ১ কোটি ৬ লাখ ১৪ হাজার, ২০২০ সালে ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ২৬৩ ও ২০২১ সালে ৯০ লাখ ৯৩ হাজার পশু কোরবানি দেওয়া হয়।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের খামার শাখা জানায়, সারাদেশে চলতি বছর কোরবানিযোগ্য ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি পশু প্রস্তুত ছিল। এর মধ্যে কোরবানি হয়েছে ৯০ লাখ ৯৩ হাজারটি পশু। গত বছর প্রস্তুত ছিল ১ কোটি ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০টি পশু। কোরবানি উপলক্ষে জবাই করা পশুর সংখ্যা ছিল ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ২৬৩টি। এ হিসাবে গত দুই বছর ধরে কমছে কোরবানিতে জবাই করা পশুর সংখ্যা।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সম্প্রসারণ শাখার পরিচালক ডা. দেবাশীষ দাশ ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোরবানির জন্যে প্রস্তুত করা যেসব পশু অবিক্রীত রয়েছে সেগুলার একটা বড় অংশ খামারিরা পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে অবিক্রীত খুব বেশি পশু খামারিদের কাছে নেই। এছাড়া বাজারে মাংসের চাহিদা ও বাজার দুই-ই ভালো। সুতরাং এসব পশু নিয়ে সমস্যায় পড়ার কথা নয়।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. হুমায়ন কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশে কোরবানির সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম করোনাভাইরাস। পূর্বে যারা ব্যক্তিগতভাবে কোরবানি দিতেন এবার তাদের একটা অংশ অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কোরবানি দিয়েছেন।

এ কৃষি অর্থনীতিবিদ বলেন, খামারিদের বাঁচাতে হলে পশুর খাদ্যপণ্যের দাম কমাতে হবে। আমরা এখনও মাংসের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হইনি, ফলে রফতানির চিন্তা বাদ দিয়ে খামারিদের খরচ কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। তবেই এর সুফল মিলবে। নাহলে খামারিদের এ দুর্ভোগ যাবে না।

ডিজিটাল হাটে রেকর্ড পরিমাণ বিক্রি

চলতি বছর ডিজিটাল হাটে পশু বিক্রি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। প্রায় ২৮০০ কোটি টাকার পশু বিক্রি হয় এ হাটে। তৃণমূল থেকে শুরু করে দেশের অধিকাংশ এলাকার খামারিরা এ হাটে পশু বিক্রি করেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতর জানায়, এ বছর ডিজিটাল অথবা অনলাইনে প্রায় দুই হাজারের মতো পশুর হাট বসেছিল। এতে পশু বিক্রি হয় দুই হাজার ৭৩৫ কোটি টাকার। বিক্রি হওয়া পশুর সংখ্যা ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫৭৯। এর মধ্যে গরু ও মহিষের সংখ্যা ২ লাখ ৯৬ হাজার ৭১০টি। আর ছাগলের সংখ্যা ৯০ হাজার ৮৬৯টি। গত বছর ডিজিটাল প্লাটফর্মে ৮৬ হাজার ৮৭৪টি কোরবানিযোগ্য পশু বিক্রি হয়। যার আর্থিক মূল্য ছিল ৫৯৫ কোটি ৭৬ লাখ ৭৪ হাজার ২৯ টাকা। গতবছরের তুলনায় এবার প্রায় ৫ গুণ বেশি গবাদিপশু অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিক্রয় হয়েছে।

একে/এসকেডি