চার বছরেও আমদানি করা প্রায় ১৬ কোটি টাকা মূল্যের টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) সার বুঝে পায়নি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। কৃষি মন্ত্রণালয় বারবার তাগাদা দিলেও যেন কোনো কূল-কিনারায় পৌঁছাতে পারছে না সরকারের এ প্রতিষ্ঠান।

ঠিক কবে এ সার হাতে পাওয়া যাবে সে বিষয়েও নেই কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য। অভিযোগ রয়েছে, ১৬ কোটি টাকায় কেনা দেড় হাজার টন টিএসপি সার পেতে দফায় দফায় সভা আর কিছু আলোচনার মধ্যেই সবকিছু সীমাবদ্ধ থাকছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের একাধিক বৈঠকে বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তির তাগিদ দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তবে বিএডিসি বলছে, তাদের কাজ চলমান রয়েছে। মৃত্তিকা বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ সার গ্রহণ করার সময় অবশ্যই গুণগত মান পরীক্ষা করে নিতে হবে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত চার বছর (১৭ জানুয়ারি ২০১৭) আগে মরক্কো থেকে ওয়ার্নাও মার্কুর জাহাজের মাধ্যমে পরিবহন করা ২৬ হাজার ৫০০ মে. টন টিএসপি সারের মধ্যে ১ হাজার ৫১৯ মে. টন সার বুঝে পায়নি বিএডিসি। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৬ কোটি টাকা।

বিএডিসির পক্ষ থেকে বলা হয়, গত চার বছর আগে পরিবহন ঠিকাদার চট্টগ্রামের নবাব অ্যান্ড কোং মরক্কো থেকে ২৬ হাজার ৫০০ মে. টন সার নিয়ে আসার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে ২৪ হাজার ৯৮১ মে. টন সার বুঝিয়ে দেয়। বাকি সার এখনও বুঝিয়ে দেয়নি ঠিকাদারি এ প্রতিষ্ঠান।

অবশ্য বিএডিসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দাবি, আলাপ-আলোচনা নিয়মিত থাকায় আরও প্রায় দুইশ মে. টন সার বুঝিয়ে দিয়েছে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে উল্লেখ করা হয়, এক হাজার ৫১৯ মে. টন সার এখনও বুঝে পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে জানান, মূলত বিএডিসির অব্যবস্থাপনার এটি একটি চিত্র। প্রতিষ্ঠানটির মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রমের খুবই বেহলা দশা। সমন্বয়হীনতা আর অব্যস্থাপনায় ক্ষতি হচ্ছে দেশের সম্পদের।

তারা বলেন, আজও সার সংরক্ষণের ৫০ ভাগ সক্ষমতাও অর্জন করতে পারেনি বিএডিসি। এর ফলে আমদানি করা সার সংরক্ষণ করতে গিয়ে অনেক সময় ক্ষতিও হচ্ছে। গচ্চা যাচ্ছে সরকারের টাকা। এছাড়া চার বছর আগে কিন্তু সরকারকে নগদ টাকা দিয়ে ওই সার কিনতে হয়েছে। কিন্তু তার পণ্য সরকারের হাতে আসেনি।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সদস্য পরিচালক (সার ব্যবস্থাপনা) ড. এ কে এম মুনিরুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বিষয়ে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই সার বুঝে পাওয়া যাবে।

তিনি জানান, পরিবহন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নবাব অ্যান্ড কোংয়ের জামানত বিএডিসির কাছে আছে। এছাড়া ওই প্রতিষ্ঠানের বিএডিসির কাছে বেশ কিছু পাওনাও রয়েছে। সুতারাং খুব যে বেশি ক্ষতির মুখে বিএডিসি পড়বে তা কিন্তু নয়। তবে বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি যেন হয় তা নিয়ে কাজ চলমান রয়েছে।

তবে মেসার্স নবাব অ্যান্ড কোম্পানির পক্ষ থেকে বিএডিসির ঘাড়ে দোষ চাপানো হয়। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকার মো. নবাব খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, চুক্তি অনুযায়ী সার ঘাটে পৌঁছানোর পর বিএডিসির নিয়ে নেওয়ার কথা। কিন্তু তারা এ সার নেয়নি। বরং আমাকে টাকা খরচ করে এ সার রক্ষণাবেক্ষণ করতে হচ্ছে। আমরা তো সার দিতে প্রস্তুত, তারা যদি না নেয় তাহলে কী করার আছে।

মৃত্তিকা বিজ্ঞানী ও সার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে বছরের পর বছর ধরে অন্যের অধীনে থাকা সারের গুণগত মান ঠিক আছে কিনা তা দেখে নিতে হবে। কেননা রক্ষাণাবেক্ষণের ওপর সারের মান ও গুণাগুণ ঠিক থাকে।

সার নষ্ট হয়ে যাওয়ার কোনো নির্দিষ্ট সময় আছে কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিধান কুমার ভান্ডার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সারের কোনো নির্দিষ্ট দিন বা তারিখ থাকে না যে এতো দিন পরে এর কার্যক্ষমতা নষ্ট হবে। তবে হ্যাঁ, রক্ষণাবেক্ষণের ওপর নির্ভর করবে ওই সারের গুণাগুণ ঠিক আছে কিনা। পরীক্ষার মাধ্যমে এটা নিশ্চিত হতে হবে। সাধারণ কৃষকের এটা বুঝে ওঠার তেমন সক্ষমতা নেই।

সার্বিক বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ শাখার অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি। যদিও বিএডিসি নিয়মিত এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সারের মূল্য প্রায় ১৬ কোটি টাকার মতো। তবে জামানত হিসেবে ওই কোম্পানির প্রায় ৮ কোটি টাকা বিএডিসির কাছে জমা আছে।

একে/এসএম