রোগ প্রতিরোধে নগরে শাকসবজির জোগান বাড়াতে নগর কৃষি নীতিমালা প্রণয়ন করে উৎপাদন, মজুত, বিপণন ও পরিবহনখাতে ভর্তুকি প্রদান নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে সেন্টার ফর ল অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্স (সিএলপিএ) ও আর্ক ফাউন্ডেশন। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে স্বল্প মূল্যে নগরবাসীদের প্রয়োজনীয় তাজা সবজির জোগান নিশ্চিত করা যাবে। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম সবজি ও ফলমূল উৎপাদনকারী দেশ হলেও দেশের জনগোষ্ঠী প্রয়োজনের তুলনায় কম তাজা ফল ও শাকসবজি গ্রহণ করছে। প্রতিবছর পর্যাপ্ত পরিমাণ সবজি ও ফল গ্রহণ করানো সম্ভব হলে ২.৭ মিলিয়ন মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হবে।

সোমবার (৫ জুলাই) সংগঠন দুটির যৌথ আয়োজিত নগরে তাজা শাকসবজি নিশ্চিতে বিদ্যমান আইন, নীতিমালা : প্রতিবন্ধকতা ও করণীয় শীর্ষক এক ওয়েবিনারে দেশের জনস্বাস্থ্য নীতি বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।

আলোচনায় মূল প্রবন্ধে আইনজীবী সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে তাজা, শাকসবজি গ্রহণে নাগরিকদের উৎসাহী করা জরুরি। ৮টি মন্ত্রণালয়ের ১৬টি খাদ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত নীতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জাতীয় পুষ্টিনীতি ব্যতীত প্রায় সব নীতিতেই তাজা শাকসবজি জোগানের বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি। নীতিমালায় নগরে তাজা শাকসবজির যোগান নিশ্চিতে কোনো ধরনের ভর্তুকি বা সহযোগিতার দেওয়ার সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার পাওয়া যায়নি। 

তিনি বলেন, এছাড়া আইন সংক্রান্ত গবেষণায় ৩১টি আইন বিশ্লেষণে তাজা সবজি বিষয়ে কৃষি বিপণন আইন, ভোক্তার অধিকার আইন এবং নিরাপদ খাদ্য আইন ব্যতীত অন্য আইনে সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি বা স্পষ্টভাবে কোনো বিষয় উল্লেখ নেই। প্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর সহযোগিতা ও সরাসরি ভর্তুকির বিষয়ে কোনো ধরনের বিধান পাওয়া যায়নি।

গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, তাজা শাকসবজি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাজা সবজির উপর ভর্তুকি দিতে হবে। এছাড়াও ট্রান্সফ্যাট, অস্বাস্থ্য খাবার ও তামাকজাত দ্রব্যের ওপর কর বাড়াতে হবে। নগরে বাড়িতে বাড়িতে কৃষি উৎসাহী করা হলে বাজারের ওপর চাপ কমবে। এ লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ এনসিডিসি রিস্ক ফ্যাক্টর সার্ভে ২০১৮ অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যার ৮৯.৬ শতাংশ প্রতিদিন প্রয়োজনীয় পাঁচ ধরনের ফল ও সবজি গ্রহণ করেন না। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন ফল গ্রহণ করে মাত্র ০.৪ শতাংশ মানুষ এবং প্রয়োজনীয় সবজি গ্রহণ করে মাত্র ২.৩ শতাংশ মানুষ। বর্তমানে দেশে ৬৭ শতাংশ মৃত্যুর কারণ অসংক্রামণজনিত রোগ। এসডিজির লক্ষ্য বাস্তবায়নে দেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগজনিত মৃত্যু ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। তাজা ফল ও শাকসবজি গ্রহণের সঙ্গে প্রাপ্তি ও দামের সম্পর্ক রয়েছে। 

তারা বলেন, স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণে উৎসাহী করতে কর হ্রাস ও ভর্তুকি প্রদান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক্ষেত্রে অস্বাস্থ্যকর ও জাঙ্কফুড নিয়ন্ত্রণ করতে কর আরোপ, বিজ্ঞাপন ও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অন্যদিকে তাজা শাকসবজি গ্রহণে উৎসাহী করতে কর বিলোপ, ভর্তুকি প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি তাজা শাকসবজি বিষয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রচারণা বা ভ্রান্ত বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে হবে।

ওয়েবিনারে যুক্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ও আর্ক ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক ড. রুমানা হক, গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউভেটরের কান্ট্রি লিড মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, স্ট্রেট ইউনিভার্সিটির পাবলিক হেলথ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. নওজিয়া ইয়াসমিন ও গ্রিন সেভারসের প্রতিষ্ঠাতা আহসান রনি, খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ইমরুল হাসান, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কৃষক বাজারের সমন্বয়ক জিয়াউর রহমান, হাটবাজারের উদ্যোক্তা তুষার চন্দন ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ তামান্না শারমিন প্রমুখ।

এমএইচএন/ওএফ