ডিজিটাল হাটে পশু বিক্রিতে মানতে হবে যেসব নিয়ম
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ ও খামারিদের লোকসান ঠেকাতে এবারও অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রোববার (৪ জুলাই) কোরবানির পশুর ডিজিটাল হাটের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। ক্রেতা বিক্রেতার স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে ডিজিটাল হাটে পশু বিক্রির ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম বাধ্যতামূলক করেছে কর্তৃপক্ষ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ডিজিটাল কোরবানির হাটের বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি নির্দেশিকা বা গাইডলাইন প্রকাশ করা হয়েছে। এ নির্দেশিকায় পশু বিক্রেতার নিবন্ধনের বিষয়ে যাবতীয় দিকনির্দেশনা রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
নির্দেশনায় বলা হয়, ডিজিটাল হাটে পশু বিক্রির জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অথবা বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হতে হবে। তবে যারা সদস্য নন তারা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবেন বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের অতিরিক্ত সচিব (মহাপরিচালক) মো. হাফিজুর রহমান।
আবেদনকারীদের মধ্য থেকে শুধুমাত্র নির্বাচিতরাই ডিজিটাল হাটে পশু বিক্রির জন্য নিবন্ধিত হবেন। নিবন্ধনের জন্য কোনো ফি দিতে হবে না। বিক্রেতা নির্বাচনের জন্য ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি দায়িত্ব পালন করবে।
বিক্রেতা হিসেবে নির্বাচিত হতে হলে মানতে হবে যেসব নিয়ম
বিক্রেতার ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। বিক্রেতাকে ভেন্ডর রেজিস্ট্রেশনের সময় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য পেশ করতে হবে। সঙ্গে ছবি এবং স্বত্বাধিকারী বা প্রতিনিধির জাতীয় পরিচয়পত্র পেশ করতে হবে। বিক্রেতাকে www.digitalhaat.net এ রেজিস্ট্রেশন ফর্মে যাবতীয় তথ্য পূরণ করে আবেদন করতে হবে। বিক্রেতার সঙ্গে চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের পর ডিজিটাল হাট কর্তৃপক্ষ বিক্রেতাকে ভেন্ডর হিসেবে তালিকাভুক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
বিক্রেতার সাইটের এপিআই ইন্টিগ্রেট করতে হবে। যদি এপিআই না থাকে সেক্ষেত্রে বিক্রেতাকে একটি ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেওয়া হবে, যা দিয়ে তিনি পশুর ছবি আপলোড করতে পারবেন এবং প্রয়োজনে আপডেট করতে পারবেন। এই পাসওয়ার্ড কোনোভাবে দ্বিতীয় ব্যক্তির সঙ্গে শেয়ার করা যাবে না।
যেসব তথ্য পূর্বেই দিতে হবে
স্বত্বাধিকারীর নাম, মোবাইল নম্বর, নিয়োজিত প্রতিনিধির নাম, মোবাইল নম্বর, বিকল্প মোবাইল নম্বর, ই-মেইল আইডি, প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্সের কপি, প্রতিষ্ঠানের লোগো, স্বত্বাধীকারীর বা প্রতিনিধির এনআইডি, প্রতিষ্ঠানের/ স্বত্বাধীকারীর /প্রতিনিধির ঠিকানা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তথ্য রাউটিং নম্বর, সুইফট কোডসহ (হিসাবের নাম, নম্বর, ব্যাংক ও ব্রাঞ্চ)।
অ্যাসোসিয়েশনের নাম, অ্যাসোসিয়েশনের মেম্বার আইডি ও রিনিউ করার তারিখ উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া বিক্রেতা নির্বাচক পরিষদ নির্দেশিকা অনুসরণ করে মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে পরিষদ গঠন করবে।
পরিষদ জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে মতবিনিময় করবে। প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করবে।
কমিটির সদস্য হিসেবে যারা থাকবেন
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর/ জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার, সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধি, এটুআই, ই-ক্যাব ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি।
কমিটি সরকারি দফতরগুলোর কাছে ওইসব কার্যক্রমের প্রতিবেদন পেশ করবে। নিয়ম অমান্যকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে কমিটি সুপারিশ দিতে পারবে। ২০২১ সালের ডিজিটাল কোরবানি হাট সংক্রান্ত সব কার্যক্রম শেষ হলে এবং সমস্ত অভিযোগ নিষ্পত্তি হলে কমিটি বিলুপ্ত হবে।
বিক্রেতাদের যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
সুন্দর জায়গায় দাঁড় করিয়ে পশুর ছবি তুলুন। ছবি এমনভাবে তুলুন যাতে পশুর সব অঙ্গ ঠিকভাবে ক্যামেরায় আসে। প্রধান ছবিটি অবশ্যই একপাশ থেকে তুলবেন।
একাধিক ছবি তুলুন এবং যদি সম্ভব হয় কমপক্ষে তিনটি ছবি আপলোড করুন। একটি ছবি কোনো একটি ইঞ্চি/ফুট লেখা বড় স্কেলের সঙ্গে পশুকে দাঁড়া করিয়ে তুলুন। অথবা রাখালকে পাশে দাঁড়া করিয়ে তুলুন যাতে পশুর আকার বোঝা যায়।
ছবি তোলার সময় ফোকাস, আলো এবং ইমেজ রেজুলেশন যেন খুব কম বা খুব বেশি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। ছবির পাশাপাশি ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিটের একটি ভিডিও করুন। ভিডিও করার সময় উপরের বিষয়গুলো খেয়াল রাখুন।
পশুর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সার্টিফিকেট থাকলে তাও সাইটে আপলোড করুন। এতে পশু বিক্রির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। পশুর ছবির ও কন্টেন্টের সঙ্গে যদি দাঁতের ছবিও দেওয়া যায় তবে ভালো হয়। দাঁতের ছবি এমনভাবে তুলুন যাতে কয়টি দাঁত পরিপক্ব হয়েছে তা দেখা যায়।
একে/এসকেডি