বিশ্বের সবচেয়ে দামি ‘সূর্যডিম’ এখন বাংলাদেশে
বিশ্বে আমের দামের দিক দিয়ে শীর্ষে থাকা ‘মিয়াজাকি’ বা ‘রেড ম্যাঙ্গো’ অথবা ‘এগ অব দ্যা সান’ চাষে বাংলাদেশে সফলতা মিলেছে। দেশে ‘সূর্যডিম আম’ নামে পরিচিতি পাওয়া এ জাতের আম খুব শিগগিরই বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে পারবেন চাষিরা।
এর মাধ্যমে বিশ্বে ফল উৎপাদনে অন্যতম শীর্ষে থাকা বাংলাদেশের পালকে আরও একটি নতুন পালক যুক্ত হতে যাচ্ছে। সূর্যডিম আমে ইতোমধ্যে প্রত্যাশার পারদ ঊর্ধ্বমুখী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিজ্ঞাপন
২০১৬ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অধীনে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পে সূর্যডিম আম চাষের কাজ শুরু হয়। প্রায় ৫ বছরের দীর্ঘ পরিশ্রমের ফল সূর্যডিম আম বাগানে শোভা পাচ্ছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক ড. মো. মেহেদী মাসুদ। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, গত কয়েক বছরের পরিশ্রমের হিসেবে এ সফলতা দেখা দিয়েছে। পরীক্ষামূলক চাষে সফলতা মিলেছে। এখন দেশব্যাপী সূর্যডিম আমের চাষ ছড়িয়ে দেওয়ার পালা।
‘দেশের মাটিতে দামি এ আম চাষ শুরুর বিষয়ে ড. মেহেদী মাসুদ বলেন, আমাদের এ প্রকল্পের কয়েকটি উদ্দেশ্যের মধ্যে অন্যতম একটি উদ্দেশ্য হলো- ফলের নতুন নতুন আধুনিক ও লাভজনক জাত দেশের মাটিতে চাষ উপযোগী করে কৃষকের মাছে ছড়িয়ে দেওয়া।
তিনি বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় আমরা থাইল্যান্ড থেকে এ জাতের আমের ১৪টি ভ্যারাইটি নিয়ে আসি। ২০১৬ সালে দেড় হাজার সূর্যডিম জাতের আম গাছ দেশের ৭৫টি হর্টিকালচার সেন্টারে মাতৃবাগান হিসেবে রোপণ করা হয়। প্রায় ৫ম বছরে এসে আমরা পূর্ণাঙ্গ সফলতার দেখা পাই। এটি আমাদের জন্যে অনেক বড় পাওয়া।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, দেশের একাধিক হর্টিকালচার সেন্টারে এ বছর বিশ্বের দামি এ আম চাষে সফলতা পাওয়া গেছে। সীমিত পরিসরে দেশের একাধিক কৃষক এ আম চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। আগামী বছর এ আমের চাষ অনেক বেশি দেখা যাবে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
তারা জানান, রাজধানীর আসাদগেটসহ, দেশের মাদারীপুরের মোস্তফাপুর, দিনাজপুর, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী ও গাজীপুরের নুরবাগের হর্টিকালচার সেন্টারে সূর্যডিম আম ফলেছে। অনেক জায়গায় ইতোমধ্যে পেকে গেছে।
গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলা হর্টিকালচার সেন্টারে প্রায় ৩৫টির মতো দামি এ আম শোভা পাচ্ছে। সেন্টারের উপপরিচালক আমিনুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমটি দেখতে অনেক সুন্দর ও খুবই আকর্ষণীয়। অনেকেই দেখার পর আমটি চাষ করার জন্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অনেকটা ল্যাংড়ার মতো দেখতে হলেও আমটি মূলত অনেকটা ডিম আকৃতির।
‘কীভাবে এ আমের চারা কৃষকেরা পেতে পারেন’ জানতে চাইলে মেহেদী মাসুদ বলেন, এ আম চাষে পরীক্ষামূলক সফলতার দেখা দেওয়ার এখন কৃষকের কাছে চারা পৌঁছানোর কাজ শুরু হয়েছে। এ লক্ষ্যে চলতি বছর এক হাজার গাছের কলম চারা তৈরি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা শুধু চাষিদের কাছে আমটির চারা দেব না। যেহেতু নতুন জাতের আম। চাষবাদে কিছু নিয়ম কানুন আছে। তাই এ বিষয়ে কৃষককে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি আমরা প্রতিটি সেন্টারে আরও বেশি গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেন ফলটি চাষে আরও বেশি পরীক্ষার কাজটি করা যায়।
কৃষিসম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জাপানের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে উৎপাদিত এ আম খেয়ে প্রশংসা করেছেন। জাপান সরকার ব্রিটিশ রানী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের এই আম উপহার দেয়। বাংলাদেশে অনেক সেন্টারে সূর্যডিম গাছ লাগানো হয়েছে, উৎপাদনও হয়েছে। সম্প্রতি চারটি আম আসাদ গেট থেকে সংগ্রহ করে প্রধানমন্ত্রীকে দেখার জন্য দেওয়া হয়েছে।
সূর্যডিম আম বিষয়ে কৃষিসম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, মিয়াজাকি জাতের এ আম পৃথিবীর অন্য সব আমের চেয়ে ১৫ গুণ বেশি সুস্বাদু ও মিষ্টি। শুধু স্বাদে নয়, দামেও ওপরের দিকে রয়েছে। ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রামের গড় ওজনের এ আমের প্রতি ১০ গ্রাম প্রায় ৯০ টাকা দামে বিক্রি হয়ে থাকে।
একে/এইচকে