যশোর সদর উপজেলার লেবুতলা গ্রামের সবজি চাষি তফসিয়ার রহমান। বারো মাসই তার জমিতে থাকে সবজির সমারোহ। তবে গত তিন বছর ধরে নিজের দেড় বিঘা জমিতে ‘আইস বল’ নামক শীতকালীন আগাম জাতের ফুলকপি চাষ করে আসছেন তিনি। এবছরও তিনি আগাম শীতকালীন জাতের এই ফুলকপি চাষ করেছেন। ফলনও পেয়েছেন ভালো। যা এরইমধ্যে বিক্রিও শুরু করেছেন।

কৃষক তফসিয়ার রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, ‘আইস বল’ নামক আগাম জাতের ফুলকপি চলতি বছরের মে মাসে আবাদ শুরু করেন। এই ফুলকপি বছরে প্রায় দুইবার চাষ করা যায়। প্রতি চাষে ফলন পেতে সময় লাগে তিন মাস। বর্তমানে তার ক্ষেতের ফুলকপি বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠেছে। মাঠ থেকেই তিনি প্রতি কেজি ফুলকপি বিক্রি করছেন ৮০ থেকে ৯০ টাকা। বিঘা প্রতি এ আগাম জাতের ফুলকপি চাষে কৃষক তফসিয়ার রহমানের খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। লাভ হচ্ছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। 

কৃষক তফসিয়ার রহমানের মতো সবজির ‘রাজধানীখ্যাত’ পুরো যশোর জেলায় এবার কয়েক হাজার কৃষক আগাম শীতকালীন সবজির চাষ করেছেন। এরমধ্যে কোনো কোনো কৃষক এরইমধ্যে পরিপূর্ণ ফলন পেয়েছেন, আবার অনেক কৃষক বীজবপণ বা পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। আগাম জাতের চাষ করা এসব সবজির মধ্যে রয়েছে ফুলকপিসহ বাঁধাকপি, বেগুন, বরবটি ইত্যাদি। অনেকে টমেটোর বীজও বপণ করেছেন। 

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলায় এবার খরিপ মৌসুমে ১৪ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ হয়েছে। যা এরইমধ্যে বাজারে বিক্রিও হচ্ছে। এছাড়া চলতি বছর শীতকালীন আগাম জাতের সবজি চাষ নিয়ে কৃষি অফিসের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১৮ হাজার হেক্টর জমি। এরইমধ্যে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন আগাম জাতের সবজির বীজবপণ এবং ফলন হয়েছে। তবে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছর তারা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ হাজার হেক্টর বেশি জমি অর্থাৎ ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন আগাম জাতের সবজির চাষাবাদ নিশ্চিত করতে সক্ষম হবেন। 

যশোর সদরের কোদালিয়া গ্রামের কৃষক আক্তারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমি এক বিঘা জমিতে শীতকালীন আগাম জাতের ফুলকপি চাষ করেছি। এছাড়াও টমেটো, বরবটি, বাঁধাকপির বীজ বপণ করেছি। অনান্য বছর যে সময়ে রোপণ করি, এবছর তার থেকে একটু আগে রোপণ করা হয়েছে। আশা করছি ফলন ভালো হবে।’

একই গ্রামের কৃষক রেজাউল করিম বলেন, ‘কৃষকেরা প্রতি বছর ভালো ফলনের জন্য চেষ্টা করে। কৃষি অফিসারদের পরামর্শ নিয়ে নতুন নতুন জাতের সবজি লাগিয়ে ভালো ফলন পায়। কিন্তু মৌসুমের শুরুতে সবজি বাজারে তোলার সময় বাজারের অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

রেজাউল করিম জানান, তিন বিঘা জমিতে এবার শীতকালীন আগাম জাতের ফুলকপি, বাধাঁকপি ও টমেটোর চাষ করেছেন। ‘আইস বল’ নামক জাতের ফুলকপি আগে চাষ করায় এরইমধ্যে বাজারেও তুলেছেন এবং ভালো দামে বিক্রি করেছেন। ক্ষেতের বাকি সবজিগুলোর ফলনও ধীরে ধীরে ভালোর দিকে যাচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলন পাবেন বলে আশা করছেন তিনি।

জেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামীম হুমায়ূন ঢাকা পোস্টকে বলেন, লেবুতলা, হৈবতপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের মাঠে কৃষকেরা এবছর আগাম শীতকালীন সবজির চাষ করেছেন। বিগত বছরগুলোতে তারা ভালো ফলন পাওয়ায় অনেক আগ্রহ নিয়ে তারা এ বছর পুনরায় চাষাবাদ করেছে। আমরা আশা করছি এবারও তারা ভালো ফলন পাবেন।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার যশোর সদর উপজেলায় আগাম শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছে দুই হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হৈবতপুর ইউনিয়নে এক হাজার ৩২৮ হেক্টর ও চূড়ামনকাটি ইউনিয়নে ৪২৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) প্রতাপ মন্ডল ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবছর খরিপ মৌসুমে জেলায় মোট ১৪০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজির চাষ হয়েছে। যা এরইমধ্যে বাজারে উঠেছে এবং কৃষকেরাও ভালো দাম পাচ্ছেন।

তিনি বলেন, এবছর আগাম শীতকালীন সবজির আবাদ শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে দেড় হাজার হেক্টর জমিতে চাষ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছর যশোর জেলায় শীতকালীন আগাম জাতের সবজি চাষে কৃষি অফিসের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার হেক্টর জমি। তবে আমরা আশা করছি প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ নিশ্চিত করতে সফল হবো। এ বিষয়ে কৃষকদেরও বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে।

জেডএস