জমিতে কোন সার কতটুকু পরিমাণে দিতে হবে অনেক সময় কৃষকরা বুঝে উঠতে পারেন না। ফলে সার কম-বেশি প্রয়োগ হয়ে যায়। একারণে ফসলও খুব বেশি ভালো পাওয়া যায় না। এসব সমস্যার সমাধানে মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউট একটি সফটওয়্যার চালু করেছে।

মাটির পুষ্টিমানের তথ্য, ফসলের পুষ্টি চাহিদা ও সারে পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ বিশ্লেষণ করে সার প্রয়োগের নির্দেশিকা দিচ্ছে অনলাইন ফার্টিলাইজার রিকমেন্ডেশন সিস্টেম (ওএফআর) সফটওয়্যারটি।

ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক কৃষিবিদ বিধান কুমার ভান্ডার বলেন, সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে কৃষকেরা অনেক বেশি উপকৃত হচ্ছেন। দিন দিন ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বাড়ছে। আমরা প্রতিনিয়ত সফটওয়্যারটি আপডেট করছি।

তিনি জানান, সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে জমির অবস্থান (জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন) ভূমি শ্রেণি ও ফসল নির্বাচন করে নির্বাচিত ফসলের জন্য সারের যাবতীয় তথ্য জানতে পারবেন কৃষক। দীর্ঘ পাঁচ বছরের গবেষণায় সফটওয়্যারটি উদ্ভাবনে সফলতা পান মৃত্তিকা বিজ্ঞানীরা।

মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে মাটির নমুনা পরীক্ষা করে অনলাইনের মাধ্যমে সার প্রয়োগের নির্দেশিকা সম্পূর্ণ একটি নতুন ধারণা। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) ফার্টিলাইজার রিকমেন্ডেশন গাইড অনুসারে সার্ভারে রাখা মাটির তথ্য ভাণ্ডার থেকে নির্বাচিত এলাকার মাটির নমুনা বিশ্লেষণ করে ওই সফটওয়্যার তাৎক্ষণিক সারের সুপারিশ বা নির্দেশিকা দেবে।

কৃষকেরা সরাসরি www.frs-bd.com অথবা www.srdi.gov.bd ওয়েবসাইটের OFRS সংযোগে গিয়ে স্থান ও ফসল নির্বাচন করে এই সেবা পাচ্ছেন। এছাড়া ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে এ বিষয়ে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। www.frs-bd.com লিঙ্কে প্রবেশ করলে একটি তথ্য সহায়িকা নির্দেশিকা আসবে। সেখানে কৃষকের নাম, কোন এলাকার জমি, কী ফসল জমিতে রয়েছে এসবসহ কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য জানতে চাওয়া হয়। সব তথ্য দিয়ে সার্চ বাটনে ক্লিক করলেই পরামর্শ সামনে চলে আসবে।

মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে কৃষকের কাছে সার সুপারিশ সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পরীক্ষামূলকভাবে ৩০টি উপজেলায় কার্যক্রম চালু করা হয়। এরপর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও কৃষি তথ্য সেবা কেন্দ্র তাদের সেবা বিতরণ প্রক্রিয়ায় এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে সেবা দেওয়া শুরু করে।

এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই কাজটির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। সবশেষে ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র (ইউআইএসসি) এই সেবা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়। বর্তমানে দেশজুড়ে সেবাটি কৃষকের দোরগোড়ায় রয়েছে।

সফটওয়্যারটি ব্যবহারের উপকারিতা হিসেবে মৃত্তিকা বিজ্ঞানীরা বলছেন, ফসল ভেদে শতকরা ২০ থেকে ৩০ ভাগ ফলন বাড়বে। এছাড়া গাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। এর ফলে রোগ বালাই ও পোকার আক্রমণ কম হচ্ছে। উৎপাদন খরচ কমার পাশাপাশি মাটির স্বাস্থ্যও ভালো থাকছে। আর উৎপাদিত ফসলের মানও ভালো হয়ে থাকে বলে কৃষকরা মত দিয়েছেন।

একে/এসএসএইচ