খুচরা বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য তেল, ডাল, ছোলা, খেজুর, চিনি ও পেঁয়াজের দাম অযৌক্তিকভাবে বেশি নিয়ে সাধারণ মানুষের গলা কাটছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। আমদানি নির্ভর এসব পণ্য যৌক্তিক দামে খুচরা বাজারে কিনতে পারছেন না ক্রেতারা। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পাঁচ পণ্য পাইকারি ও খুচরা বাজারে যৌক্তিক দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করার বিষয়টি উঠে আসে কৃষি বিপণন অধিদফতরের গবেষণায়। এতে পণ্যগুলোর যৌক্তিক দামও তুলে ধরা হয়েছে।

গবেষণার উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, সাধারণত বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে রমজান মাসে কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা তুলনামূলক বেশি থাকে। এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী প্রয়োজনীয় দ্রব্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির পাশাপাশি অতি মুনাফা লাভের চেষ্টা করে।

চলতি বছর আসন্ন রমজানে এ ধরনের সুযোগ বন্ধের লক্ষ্যে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার পর্যালোচনা, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এ পাঁচ পণ্যের চাহিদা, আমদানির পরিমাণ, আমদানি মূল্য, উৎপাদনের পরিমাণ, পাইকারি ও খুচরা মূল্য এবং বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কৃষি বিপণন অধিদফতর গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ভোজ্যতেলের বাৎসরিক সম্ভাব্য চাহিদা ২০ লাখ মেট্রিক টন। রমজান মাসে চাহিদা দাঁড়ায় দুই লাখ মেট্রিক টনে। গত জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লিটার প্রতি ১০৮ টাকা দরে ১৬ দশমিক ২৩ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল আমদানি করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ লাখ মেট্রিক টন। গবেষণায় বলা হয়, খুচরা বাজারে যৌক্তিক দাম হওয়া উচিত ১ লিটার ক্যানের ১৩১ থেকে ১৪১ টাকা, ৫ লিটার ক্যানের ৬৬০ টাকা। কিন্তু বাজারভেদে এর চেয়ে বেশি দামে তেল বিক্রি করতে দেখা গেছে।

বছরে মসুরের ডালের সম্ভাব্য চাহিদা ৫ লাখ মেট্রিক টন। রমজান মাসে এর চাহিদা দাঁড়ায় ০.৮০ লাখ মেট্রিক টনে। জুলাই থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ১ দশমিক ৮৩ লাখ মে. টন, যার আমদানি মূল্য প্রতিকেজি ৭১ টাকা (উন্নত) ও মোটা ৪১ টাকা। আর দেশে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ দশমিক ৬৬ লাখ মেট্রিক টন।

গবেষণায় বলা হয়, যৌক্তিকভাবে এ পণ্যের দাম পাইকারিতে (উন্নত) ৯০ থেকে ৯৫ টাকা, খুচরা বাজারে ৯৭ থেকে ১০৩ টাকা হওয়া উচিত। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে উন্নত মসুরের ডাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। এতে পেঁয়াজের বাৎসরিক চাহিদা উল্লেখ করা হয়েছে ২৬ লাখ মেট্রিক টন। রমজানে চাহিদা থাকে ৩ লাখ মেট্রিক টন। জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ৪ দশমিক ৭ লাখ মেট্রিক টন। দেশে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৯ দশমিক ৫৫ লাখ মেট্রিক টন। বাজারে পেঁয়াজের সর্বোচ্চ পাইকারি দাম প্রতিকেজি ৩৫ টাকা ও খুচরা ৪০ টাকা হওয়া উচিত। কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে, বাজারভেদে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে।

দেশে ছোলার বাৎসরিক চাহিদা রয়েছে ২ দশমিক ১০ লাখ মেট্রিক টন। রমজানে চাহিদা দশমিক ৮০ লাখ মেট্রিক টন। জুলাই থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ৫৫ টাকা কেজি দরে আমদানি হয়েছে ১ দশমিক ০১ মেট্রিক টন। পাইকারি বাজারে ছোলার দাম কেজিপ্রতি ৫৮ থেকে ৬২ টাকা ও খুচরা বাজারে ৬৩ থেকে ৬৭ টাকা হওয়া উচিত। তবে সরেজমিনে দেখা যায়, কেজিপ্রতি ৮৫ থেকে ৯০ টাকা দরে ছোলা বিক্রি হচ্ছে। খোদ সরকারি সংস্থা টিসিবি ৮০ টাকা কেজি দরে ছোলা বিক্রি করছে।

বছরে চিনির চাহিদা রয়েছে ১৮ লাখ মেট্রিক টন। রমজানে চাহিদা ১ দশমিক ৩৬ মেট্রিক টন। জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ১৩ দশমিক ২৩ লাখ মেট্রিক টন। যার অপরিশোধিত আমদানি মূল্য প্রতিকেজি ৩০ টাকা। পাইকারি বাজারে পরিশোধিত মূল্য ৬৩ টাকা ও খুচরা বাজারে ৬৭ থেকে ৬৮ টাকা হওয়া উচিত বলে মনে করছে কৃষি বিপণন অধিদফতর। কিন্তু বাজারে প্রতিকেজি চিনি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বছরে খেজুরের চাহিদা রয়েছে ৬০ থেকে ৭২ মেট্রিক টন। রমজানে চাহিদা ৪০ থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত আমদানির পরিমাণ দশমিক ৬২ লাখ মেট্রিক টন। সাধারণ মানের আমদানি মূল্য প্রতিকেজি ৪৩ টাকা, আর মধ্যম মানের ১০২ টাকা। পাইকারিতে সাধারণ মানের খেজুর ৬০ থেকে ৭০ টাকা ও খুচরায় ৮০ থেকে ১০০ টাকা এবং মাধ্যম মানের পাইকারিতে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা ও খুচরায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা হওয়া উচিত। কিন্তু বাজারভেদে সাধারণ মানের খেজুর প্রতিকেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকা ও মাধ্যম মানের খেজুর ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

কৃষি বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বলা যায় রমজানের বাজারে চাহিদা ও সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। তাই অস্বাভাবিকভাবে এসব পণ্যের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই।

একে/এসএসএইচ