বোরো সংগ্রহে ব্যবহার হবে কৃষিযন্ত্র, কাজ করবে ৮০ জনের
২০২০ সালের এপ্রিল মাস। মাঠ জুড়ে বোরো ধানের সবুজ রঙ সোনালীতে রূপ নিচ্ছে। অপেক্ষা লাখ লাখ হেক্টর জমির ধান গোলায় তোলার। এমন সময় মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশজুড়ে শুরু হয় লকডাউন। অন্যদিকে আগাম বন্যার আভাস। দ্রুত বোরো ধান কাটতে হবে। কিন্তু যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় শ্রমিক সংকটে সঠিক সময়ে ধান সংগ্রহ নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। লকডাউনের মধ্যে শ্রমিকের যাতায়াত, থাকা, খাওয়া থেকে শুরু করে সব ব্যবস্থা করতে অনেকটা হিমশিম খেতে হয় কৃষি মন্ত্রণালয়কে।
করোনার প্রকোপ এখনও কাটেনি, বরং গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ রাক্ষুসে হয়ে উঠেছে ভাইরাসটি। সরকারও সংক্রমণ রোধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে। এদিকে লাখ লাখ হেক্টর জমির বোরো ধান কাটার সময়ও হয়ে গেছে। তবে এবার আর শ্রমিক সংকটে পড়তে হবে না কৃষককে। এক্ষেত্রে গত বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাবে মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে ব্যবহার করা হবে ‘কম্বাইন হারভেস্টার’ নামে কৃষিযন্ত্র, যেটি ৮০ জনের বেশি শ্রমিকের কাজ করতে সক্ষম।
বিজ্ঞাপন
আলাপকালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ বিভাগ) মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ধান কাটা শুরুর আগেই আমরা কৃষকের কাছে যন্ত্র পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। একেকটি যন্ত্র ৮০ জন শ্রমিকের কাজ করে দেবে। এছাড়া গত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে আগে থেকেই আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া আছে।
স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইতোমধ্যেই শ্রমিকের যাতায়াতসহ সার্বিক বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল বলেন, আমাদের কৃষি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সবাই মাঠে কৃষকের পাশে থেকে কাজ করছেন। আমরা আশা করছি এ বছর নির্বিঘ্নে কৃষকরা ধান ঘরে তুলতে পারবেন।
চলতি বোরো মৌসুমে সারাদেশে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক এ কে এম মনিরুল আলম ঢাকা পোস্টকে জানান, চলতি বছর ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ আবাদ হয়েছে সাড়ে ৪৩ লাখ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০৫.৮ লাখ মেট্রিক টন। গত বছর ২০১ লাখ মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদন হয়।
তিনি জানান, উচ্চ ফলনশীল, স্থানীয় ও উফশি এ তিন জাতের বোরো ধানের আবাদ করে থাকেন কৃষকরা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়ে থাকে উফশি জাতের বোরো ধান। চলতি বছরে এ জাতের ধান ৩২ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ৩ হাজার ২০ কোটি টাকার ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে সারাদেশে ৫০০ উপজেলায় ১৬১৭টি কম্বাইন হারভেস্টার, ৭০১টি রিপার, ১৮৪টি রাইস ট্রান্সপ্লান্টারসহ মোট ৫ হাজার ৭৭৬টি বিভিন্ন ধরণের কৃষিযন্ত্র কৃষকের মধ্যে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে হাওরে ধান সফলভাবে কাটার জন্য ৫১০টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ২৩১টি রিপার দেওয়া হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. আসাদুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে জানান, এ বছর শ্রমিক সংকট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমরা অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে শুরুতেই যন্ত্র পৌঁছে দিচ্ছি কৃষকের কাছে। একটা কম্বাইন হারভেস্টার ৮০ জনের বেশি শ্রমিকের কাজ করবে। ৫০০ উপজেলায় দেড় হাজারের বেশি এ যন্ত্র দেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, এই যন্ত্রগুলো শুধু একটি এলাকার জন্যে না। দেখা গেল হাওরে ধান কাটা শেষ, তখন চলে যাবে অন্য এলাকায়। আমরা শুরু থেকেই করোনাভাইরাসকে গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নিয়েছি। কৃষিমন্ত্রীর নির্দেশনা আর মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় মাঠ পর্যায়ে কাজ চলছে। ধান উৎপাদনের সবচেয়ে বড় সময় হলো বোরো মৌসুম। এ সময়ে যেন কোনো সমস্যা তৈরি না হয় সেদিকে সর্বোচ্চ নজর দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১ এপ্রিল সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের আস্তনা গ্রামে বোরো ধান কাটার কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
একে/এসএসএইচ