জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি
ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে পৃথিবী। বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ থেকে এখন আরও খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে বিশ্ব। এদিকে সর্বোচ্চ কার্বন নিঃসরণ করা দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড’-এর অর্থায়ন নিয়েও রয়েছে নানা সংশয়। রয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর স্বাধীনভাবে কাজ করার প্রতিবন্ধকতা ও জলবায়ু সংকট সমাধানে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব।
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট, সমাধান, সরকারের পদক্ষেপ ও প্রতিবন্ধকতাসহ নানান প্রসঙ্গ নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত ও ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশ-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। তার মুখোমুখি হয়েছিলেন ঢাকা পোস্টের নিজস্ব প্রতিবেদক মুছা মল্লিক।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা পোস্ট : দেশে এই প্রথম দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো নিয়ে আঞ্চলিক জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই সম্মেলনের উদ্দেশ্যে সম্পর্কে জানতে চাই।
সাবের হোসেন চৌধুরী : আমরা এটি আঞ্চলিক পর্যায়ে শুরু করেছি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাওয়ার আগে কিছু ধাপ রয়েছে। সব দেশ নিয়ে তো একবারেই ঐক্যমতে পৌঁছানো যায় না। ফলে আঞ্চলিকভাবে শুরু করে কয়েকটি দেশ মিলে যদি আমরা একমত হই, তাহলে এই ঐক্যমতের ভিত্তিতে আরেকটু সামনের দিকে আগানো সম্ভব হবে৷। এটাই যুক্তিযুক্ত পদ্ধতি। আমরা যদি জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বলি, তাহলে দক্ষিণ এশিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সুতরাং এখানে আমাদের সবাই একযোগে কাজ করার একটি কমন গ্রাউন্ড আছে। একারণেই আমরা বলছি- ‘রেজিলিয়েন্ট সাউথ এশিয়া’। এই বিষয়টিকে আমরা অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। এটা ছাড়া অন্যান্য যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে যেমন- পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি, জনস্বাস্থ্য, পানি দূষণ, বায়ু দূষণ; এ বিষয়গুলোও আমাদের জন্য কমন। আমাদের চ্যালেঞ্জগুলোও কিন্তু একই। সুতরাং আমরা মনে করছি, শুধু জাতীয়ভাবে নয় বরং আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এসব বিষয়ে আঞ্চলিকভাবে একটি ঐক্যমত গড় তোলা যায় কি না।
ঢাকা পোস্ট : জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কি ধরনের পূর্বাভাস দিতে চান?
আগামী কয়েক বছরে জলবায়ু আমাদের কৃষিতে জিডিপির ৩০ ভাগ কমে যাবে। সেটা কমে গেলে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার জায়গাটাও নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে।
সাবের হোসেন চৌধুরী : জাতীয় সংসদে আমরা একটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব করেছিলাম। সেখানে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত এই সমস্যাকে অস্তিত্বের সংকট (অ্যাগজিসটেনশিয়াল ক্রাইসিস) হিসেবে উল্লেখ করেছি। এখন আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, সেটা তখন ছিল না। যেমন- আগামী কয়েক বছরে জলবায়ু আমাদের কৃষিতে জিডিপির ৩০ ভাগ কমে যাবে। সেটা কমে গেলে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার জায়গাটাও নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে। এদিকে, বাংলাদেশের প্রতি সাতজন নাগরিকদের মধ্যে একজন কোনো না কোনোভাবে ডিসপ্লেসমেন্টের শিকার (স্থানচ্যুত) হবে।
ক্লাইমেট রিফিউজি ব্যাপকভাবে বাড়ছে। আমাদের অর্থনীতির দিকে যদি তাকান, তাহলে ২০৫০ সালের মধ্যে আমাদের জিডিপির ২ শতাংশ হারাতে হবে। পরবর্তীতে এই জিডিপি হারানোর পরিমাণ ৯ শতাংশ অবধি হতে পারে। বাংলাদেশে এখন ৬ শতাংশের কিছু বেশি প্রবৃদ্ধির হার; এটি কিন্তু নেগেটিভ গ্রোথ হয়ে যাবে। এর ফলে আমাদের এতদিনের যে সমৃদ্ধি বা এগিয়ে যাওয়া, এই পুরো বিষয়টি হুমকির মধ্যে পড়ে যাবে। বাংলাদেশের মানচিত্রে তাকালে দেখা যাবে নিচে দক্ষিণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। আবার মানচিত্রের উপরের দিকে হিমালয়। ফলে এই দিকটি বিশ্লেষণে দেখা যাবে, আগামীতে বাংলাদেশে পানির সংকট দেখা দেবে। পানির অপর নাম জীবন। ফলে সহজাতভাবেই আমাদের জনজীবন হুমকির মধ্যে পড়ে যাবে। খাদ্য নিরাপত্তা কিংবা দারিদ্র্য বিমোচন; সব কিছুতেই পিছিয়ে যেতে হবে। এই সমস্যা মোকাবিলা করা এবং টেকসই সমাধান বের করাটা আমাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
আমি একটা কথা প্রায়ই বলি- আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর উদযাপন করলাম কিন্তু আগামী পঞ্চাশ বছরে দেশ কোথায় অবস্থান করবে বা বাংলাদেশের চেহারা কি হবে সেটা কিন্তু নির্ভর করছে এই একটি বিষয়ের ওপর।
ঢাকা পোস্ট : জলবায়ু পরিবর্তনে জিডিপির ওপর প্রভাব এবং আগামীতে খাদ্য, বাসস্থান ও পানির সংকট নিরসনে সরকারের পদক্ষেপ যথেষ্ট কি না?
সাবের হোসেন চৌধুরী : সমস্যাটা তো আসলে বৈশ্বিক। সেহেতু সরকারের পদক্ষেপ এককভাবে কখনো যথেষ্ট হবে না। বাংলাদেশে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ করে ০.৫ শতাংশের কম। কিন্তু সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এই যে আমরা প্রাকৃতিক হুমকির মুখে পড়ছি, এটার জন্য তো বাংলাদেশ দায়ী নয়।
সরকারের যতটুকু করার, সাধ্যমতো করেছে। এখন আন্তর্জাতিক মহলে যারা গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের জন্য দায়ী, তাদের কিন্তু ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
ফলে এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে যে পরিমাণ অর্থায়ন দরকার, সেটা আমাদের উন্নত বিশ্বকে দিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা করার জন্য সরকার গত বাজেটে ২৫টি সম্পৃক্ত মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ৩৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে৷ সরকার একটা খাতেই এত টাকা দিচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে যা করা দরকার, সেটা তো করতে চেষ্টা করছে বরং বেশিই করছে। আমরা জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের দিকে তাকালে দেখতে পাব- এই ফান্ড স্থাপন করেছিলাম ২০০৯ সালে। তখন কিন্তু কেউ জলবায়ু নিয়ে এত কথা বলেনি। সরকারের যতটুকু করার, সাধ্যমতো করেছে। এখন আন্তর্জাতিক মহলে যারা গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের জন্য দায়ী, তাদের কিন্তু ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
ঢাকা পোস্ট : উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ‘লস অ্যান্ড ডেমেজ ফান্ড’ নিয়ে একটি বিতর্ক চলছে। উন্নত দেশগুলো এই ফান্ড দিতে অসহযোগিতা করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় কিভাবে দেখছেন?
সাবের হোসেন চৌধুরী : ইউনাইটেড ন্যাশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি) গঠিত হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ত্রিশ বছর আগে। যাত্রার প্রথম দশ বছর কার্বন নিঃসরণ কিভাবে কমানো যায়, সেটা নিয়ে কাজ শুরু হলো। পরবর্তীতে তাদের ভুল ভেঙ্গে সিদ্ধান্ত নিল এর পাশাপাশি অ্যাডাপ্টেশনও (অভিযোজন) করতে হবে। এভাবে বিশ বছর চলার পর দেখা গেল কোনটাই ভালোভাবে কাজ করছে না। মিটিগেশন কিংবা অ্যাডাপ্টেশন কোনোটাই যথেষ্ট নয়। একইসঙ্গে আমাদের যে ক্ষতিগুলো হচ্ছে, সেগুলো স্থায়ী হচ্ছে। কেউ যদি তার ভিটাবাড়ি থেকে স্থানচ্যুত হয়, তবে সেখানে তো আর ফিরে জেতে পারছেন না। ফলে একটি স্থায়ী ক্ষতি হচ্ছে। ফলে দেখা গেছে, আমাদের চুক্তি অনুযায়ী কাজ হয়নি। এখানে উন্নত বিশ্ব অনেকদিন ধরে বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির কারণে তারা ক্ষতিপূরনও দিতে চায়নি। তারা যে ক্ষতিটা করল এর দায় তারা স্বীকার করতে চায় না। তারা মনে করে- একবার যদি তারা এই দায় স্বীকার করে, তাহলে ভবিষ্যতে তাদের বিরুদ্ধে যে পরিমাণ অভিযোগ এবং ক্ষতিপূরণের দাবি আসবে তারা সে পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে সক্ষম হবে না।
আমাদের চুক্তি অনুযায়ী কাজ হয়নি। এখানে উন্নত বিশ্ব অনেকদিন ধরে বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির কারণে তারা ক্ষতিপূরনও দিতে চায়নি।
মিশরে গত বছর যে কপ হয়েছে সেখানে একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু কিভাবে এই অর্থায়ন হবে বা কিভাবে এই অর্থ একত্রিত করা হবে, সে বিষয় আগে ঠিক করতে হবে। আমরা চাচ্ছি, এগুলো ঠিক করে দুবাইতে কপ ২৮ এ অর্থবহ কিছু হোক। ফান্ডটা চালু হোক কিংবা কিছু অর্থ একত্রিত হোক। লস অ্যান্ড ড্যামেজে ফান্ডকে সচল করতে হবে। নীতিগত ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়ন করতে হবে।
এছাড়া বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশকে প্যারিস অ্যাগ্রিমেন্টে ১০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা এটার ধারে কাছেও যায় নি। তারা বলছে- তারা ৮০ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। আবার অনেক সংস্থা বলছে- এটা ১০ বা ১১ বিলিয়ন। কারণ ওভারসিস ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যানস যেটা এমনিতেই দেওয়ার কথা, সেটাকে তারা নতুনভাবে সাজিয়ে বলছে এটা অ্যাডাপ্টেশন তহবিল। পুরনো অঙ্গীকারকে র্যাপিং করে যদি বলেন, এটা জলবায়ুর ফান্ড তাহলে তো সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। মিশরের কপে আমরা জোরালোভাবে উঠিয়েছি যে ক্লাইমেট ফাইনান্স-এর কোনো সংজ্ঞা নেই। ফলে অন্য দেশ যখন এটি উচ্চারণ করে বা আমরা যখন বলি, তখন কিন্তু একই কথা বলছি না। ফলে সংজ্ঞাটা ঠিক করতে হবে। এটা ঠিক না করলে কে কত দিল কিংবা জবাবদিহিতারও কোনো প্রশ্ন আসবে না। আমরা চাচ্ছি, এই কপেই একটি সংজ্ঞা দাঁড় করাতে। এটা ঠিক করতে না পারলে কে কত দিচ্ছে বা এটা জলবায়ু ফান্ড নাকি অন্য খাতের অর্থকে জলবায়ুর ফান্ড বলে চালিয়ে দেওয়া হলো সেটা নিয়ে সমস্যা থেকেই যাবে।
ঢাকা পোস্ট : জলবায়ু পরিবর্তনে আইনকানুনের প্রয়োগ ঠিকভাবে হচ্ছে না। অনেক কলকারখানা, ইটভাটা অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলছে। এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের বাধা কোথায়?
সাবের হোসেন চৌধুরী : এখানে প্রথমত আইন প্রয়োগ করা এবং সংশ্লিষ্ট যারা রয়েছ, তারা আইনটি কতটা সম্মান করছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ। অনেক জায়গায় আইন মানা হচ্ছে না। তাদের সাজা দেওয়া হচ্ছে। আপনি কত সাজা দেবেন? এর পরিবর্তে মানুষকে সচেতন করতে হবে। পাশাপাশি যারা সনাতন পদ্ধতিতে ইট পোড়ায় তাদের বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি তহবিল দেওয়া যেতে পারে উন্নত পদ্ধতিতে ইট পোড়ানোর জন্য। তাহলে কিন্তু দূষণের মাত্রা অনেকখানি কমে যাবে।
ঢাকা পোস্ট : বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ বা অভিযোজনের জন্য এই মুহূর্তে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে আপনি মনে করেন?
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্য এটা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ২০৬৮ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে।
সাবের হোসেন চৌধুরী : জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রথমেই রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি। আমি যখন ইউএনএফসিসিসি সই করি, তখন থেকে আজকের অবস্থা অনেক খারাপ। পরিস্থিতি উন্নত করার জন্য এই সই করা হলেও সেটা বিপরীত দিকে যাচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্য এটা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ২০৬৮ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে। প্রতিটি লক্ষ্যমাত্রার ক্ষেত্রে এক ধরনের স্থবিরতা দেখা গেছে। ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। এটা সারা বিশ্বের রাজনৈতিক সদিচ্ছার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আপনি চুক্তি করবেন, ভালো ভালো কথা বলবেন কিন্তু সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ কিংবা অর্থায়ন করবেন না, সেটাই বড় সমস্যা। কয়েকদিন আগে জাতিসংঘের মহাসচিব বললেন- আমরা গ্লোবাল ওয়ার্মিং থেকে বয়েলিং দিকে চলে যাচ্ছি। ফলে প্রথমেই কার্বন নিঃসরণের দিকে তাকাতে হবে। পদক্ষেপ নিতে হবে।
ঢাকা পোস্ট : জলবায়ু নিয়ে বেসরকারি সংস্থা যে কাজ করছে, তাদের ইনিশিয়েটিভ কিভাবে দেখছেন?
সাবের হোসেন চৌধুরী : জাতিসংঘ ছাড়া কোনো সংস্থাই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। সব সংস্থাই কোনো না কোনো দেশের সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে। সুতরাং বিশ্বব্যাপী এই সংকট মোকাবিলায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি। আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশ যে কথা বলে, তাদের সেই কথা এবং কাজের মধ্যে মিল থাকতে হবে। সেটা নিশ্চিত করা না গেলে এই পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।
ঢাকা পোস্ট : জনসাধারণের জন্য কি পরামর্শ থাকবে?
সাবের হোসেন চৌধুরী : আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দরকষাকষিতে দেখা গেছে- যারা দূষণের জন্য দায়ী তাদেরই এর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এটাই জলবায়ু পরিবর্তনের মূলনীতি। কলকারখানার দূষণ বা শিল্পের দূষণ নিয়ে আমরা সচেতন হলে কিছুটা সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু সেটা তো আর হচ্ছে না। আমরা কয়জন পরিবেশের বিষয় সচেতন? কয়েকদিন আগে কর্ণফুলী নদী খনন করতে দেখা গেছে সেখানে প্লাস্টিকের আস্তরণ ৩ থেকে ৭ ফিট গভীরে। এতে ড্রেজিং মেশিনও অকার্যকর হয়ে গেছে। এই প্লাস্টিক দিয়ে শুধু নদী দূষণ হচ্ছে না। এগুলো মাইক্রো প্লাস্টিক হয়ে গেলে মাছ খেয়ে ফেলে। এই মাছ আমরা খেলে আমাদের শরীরেও প্লাস্টিক প্রবেশ করে। আমরা যেটা বর্জ্য হিসেবে ফেলে দিচ্ছি, সেটাই আবার খাদ্য হিসেবে আবার গ্রহণ করছি। এক্ষেত্রে সচেতনতা জরুরি। আমরা সচেতন না হলে এগুলো থেকে পরিত্রাণ পাওয়া কঠিন।
ঢাকা পোস্ট : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
সাবের হোসেন চৌধুরী : আপনাকেও ধন্যবাদ। ঢাকা পোস্ট এগিয়ে যাক।
/এমএম/এফকে/