আমের মুকুল

কোথাও তীব্র রোদ, কোথাও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি- এমন বিরূপ আবহাওয়া পরিস্থিতি মুকুল থেকে ফোটা আমের জন্য বয়ে আনছে অশনিসংকেত। এ সময়ে আম চাষে সঠিক যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি।

কেননা মৌসুমের এ সময়ে আমে বিভিন্ন রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা যায়। সঠিক সময়ে রোগ ও পোকামাকড় দমন করতে ব্যর্থ হলে আমের ফলন মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে।

এমনটি জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শরফ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমের বিভিন্ন রোগ ও পোকামাকড় দমনের জন্য সঠিক বালাইনাশক/ছত্রাকনাশক নির্বাচন করে নির্দিষ্ট মাত্রায় বা ডোজে সঠিক সময়ে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে ব্যবহার করলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে।’

এ ফল বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘চলতি মৌসুমের আবহাওয়া আম উৎপাদনের উপযোগী থাকলেও গত ২/৩ দিন ধরে ফলটির উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত জেলাগুলোতে কুয়াশা, মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়াসহ দিনের তাপমাত্রা কমতে দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও অনেক আম গাছে নতুন পাতা বের হতে দেখা যাচ্ছে। এই অবস্থায় বাগানে হপার বা ফুদকি পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। সঠিক সময়ে হপার পোকা দমন করা না গেলে আমের ফলন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে। হপার পোকা আম গাছের কচি অংশের রস চুষে খেয়ে বেঁচে থাকে।’

শরফ উদ্দিন বলেন, ‘আমের মুকুল বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এগুলো মুকুলকে আক্রমণ করে। এই পোকা আমের মুকুল থেকে রস চুষে খায়। ফলে মুকুল শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে ঝরে পড়ে। একটি হপার পোকা দৈনিক তার দেহের ওজনের ২০ গুণ পরিমাণ রস শোষণ করে খায় এবং দেহের প্রয়োজনের অতিরিক্ত আঠালো রস মলদ্বার দিয়ে বের করে দেয় যা মধুরস বা হানিডিউ নামে পরিচিত।’

তিনি বলেন, ‘এ মধুরস মুকুলের ফুল ও গাছের পাতায় জমা হতে থাকে। মধুরসে এক প্রকার ছত্রাক জন্মায়। এই ছত্রাক জন্মানোর কারণে মুকুল, ফুল ও পাতার উপর কালো রঙয়ের স্তর পড়ে যা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। চলতি মৌসুমে বৃষ্টি হওয়ার পর এর আক্রমণ ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই পোকার আক্রমণে আমের উৎপাদন শতকরা ১০০ ভাগ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে।’

দমন পদ্ধতি

হপার পোকা অন্ধকার বা বেশি ছায়াযুক্ত স্থান পছন্দ করে, তাই নিয়মিতভাবে গাছের ডালপালা ছাঁটাই করতে হবে যাতে গাছের মধ্যে আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে। আম মোটর দানাকৃতি হলেই ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলিটার হারে,  সাইপারমেথ্রিন ১০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে এক মিলিলিটার হারে অথবা ডেসিস ২.৫ ইসি  নির্দেশিত মাত্রায় মিশিয়ে সম্পূর্ণ গাছ স্প্রে করতে হবে।

আমের হপার পোকার কারণে যেহেতু সুটিমোল্ড বা ঝুল রোগের আক্রমণ ঘটে সুতরাং এই রোগ দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে দুই গ্রাম হারে সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন- থিয়োভিট, কুমুলাস অথবা অন্য নামের ছত্রাকনাশক হপার পোকা দমনের জন্য ব্যবহার্য কীটনাশকের সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

একে/এফআর