কৃষির তিন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী ভারত
কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, ফুড প্রসেসিং ও মাছ চাষ খাতে বিনিয়োগের পাশাপাশি সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেছে ভারত।
মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে শুরু হওয়া ডিজিটাল কনফারেন্সে ভারতের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল এ আগ্রহের কথা তুলে ধরেন। কৃষিখাতে ভারত-বাংলাদেশের পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে দু’দেশের মধ্যে এ ডিজিটাল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।
বিজ্ঞাপন
রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ কনফারেন্সের আয়োজনে ছিলো এফবিসিসিআই ও কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই)।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ভারতকে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও অ্যাগ্রোপ্রসেসিংয়ে বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিনিয়োগের আহ্বান জানান কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
বাংলাদেশ কৃষি যান্ত্রিকীকরণের দিকে যাচ্ছে উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, সরকার এ বছর ২০০ কোটি টাকার মাধ্যমে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে কৃষকদের কম্বাইন্ড হারভেস্টার, রিপারসহ কৃষিযন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে। এছাড়াও তিন হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রায় ৫১ হাজার কৃষিযন্ত্রপাতি কৃষকদের দেয়া হবে।
কৃষিমন্ত্রী জানান, দেশে বর্তমানে কৃষিযন্ত্রপাতির বাজার প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলারের। যা বছরে গড়ে ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। এ বিশাল বাজারে ভারত যদি সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিনিয়োগে করে, তবে দুই দেশই উপকৃত হবে। বাংলাদেশে কৃষিযন্ত্রপাতি তৈরির কারখানা স্থাপন ও অ্যাসেম্বল হলে দেশ যেমন এগিয়ে যাবে পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। আর কৃষকেরা কম দামে যন্ত্রপাতি কিনতে পারবেন।
ড. রাজ্জাক বলেন, আমরা কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণে ভারতের সহযোগিতা দেখতে চাই। ভারতীয় কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট স্থাপন করতে পারে।
কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ভারতের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বলেন, ভারত ও বাংলাদেশে ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ কৃষিতে সম্পৃক্ত। ভারত বাংলাদেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, ফুড প্রসেসিং ও ফিস-অ্যাকুয়াকালচার এই তিনটি খাতে অধিক গুরুত্বসহ কৃষির সকল ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ও সহযোগিতা করতে আগ্রহী। খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে একসাথে কাজ করলে বৈশ্বিক খাদ্যের বাজার এই দুদেশের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারে কৃষির গেম চেঞ্জিং সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করেন পীযূষ গয়াল বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কৃষিখাতে জিটুজি এবং বিটুবি সহযোগিতা ও বিনিয়োগের খাত চিহ্নিতকরণে এই কনফারেন্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
কনফারেন্সে বাংলাদেশী রফতানি পণ্যের ওপর আরোপিত এন্টি ডাম্পিং শুল্কের কথা উল্লেখ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, এসব পদক্ষেপের কারণে আমাদের রফতানি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ সময়ে তিনি শুল্কের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, বাংলাদেশের বেসরকারি খাত প্রতিবছর ভারত থেকে কয়েক শত কোটি ডলার পণ্য আনে, যা আরো বৃদ্ধির ভাল সম্ভাবনা রয়েছে। দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্য আনতে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই। এটা যৌথ উদ্যোগ যা শিল্প বৈচিত্র্যকরণ ও বাজার বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে সম্ভব। আমরা বিশ্বাস করি, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে যে কোন লক্ষ্য অর্জন করতে পারি।
অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী, টাটা স্টিলের সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক টি ভি নরেন্দ্রন, মাহিন্দ্র ও মাহিন্দ্র'র সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক পবন গোয়েঙ্কা, সিআইআই'র মহাপরিচালক চন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি, এফবিসিসিআই'র পরিচালক সুজিব রঞ্জন দাশসহ অনেকেই বক্তব্য রাখেন। এ সময় কৃষিসচিব মো: মেসবাহুল ইসলাম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
একে/ওএফ