বাংলাদেশের চেয়ে বড় এলাকার বরফ কমেছে অ্যান্টার্কটিকায়
অ্যান্টার্কটিকার বরফের রাজ্য ছোট হয়ে আসছে ধীরে ধীরে। ৪৩ বছর আগে যখন থেকে স্যাটেলাইট ব্যবহার করে এই বরফ রাজ্যের সীমা বোঝার চেষ্টা শুরু হয়, তখন থেকে এ যাবৎকালে অ্যান্টার্কটিকায় সবচেয়ে কম বরফের তথ্য পাওয়া গেছে। অ্যান্টার্কটিকায় বরফ রাজ্যের বিস্তৃতি এখন ২০ লাখ বর্গকিলোমিটারের নিচে নেমে এসেছে।
এ বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারির তথ্য অনুযায়ী অ্যান্টার্কটিকায় ১৯ লাখ ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত হয়ে রয়েছে বরফ। ২০১৭ সালের চেয়ে যা ১ লাখ ৯০ হাজার বর্গকিলোমিটার কম; যা গোটা বাংলাদেশের আয়তনের চেয়ে বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টার (এনএসআইডিসি) এ তথ্য দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এথেনসের ওহিও ইউনিভার্সিটির জলবায়ু বিশেষজ্ঞ রায়ান ফগট বলছেন, ২০১৭ সালে যেভাবে বরফ কমে এসেছিল, এবারও একইভাবে কমেছে। ২০১৭ সাল থেকে সমুদ্র ঢেকে রাখা বরফের পরিমাণ গড়ের চেয়ে কম ছিল। ২০২০ সালে তা গড় পরিমাণের কাছাকাছি চলে আসে। আর ২০২১ সালে এসে আবার তা কমে গেল। ২০১৭ সালেও একইরকম ঘটনা ঘটেছিল। সেবারও বরফের পরিমাণ শুরুতে বেড়ে, দ্রুত তা কমে যেতে শুরু করে।
এবার বরফ এত কমে যাওয়ার পেছনে শক্তিশালী বাতাস ভূমিকা রেখেছে। এ বাতাস সমুদ্রে ভাসমান বরফগুলোকে রোজ সি’র বাইরে আরও উত্তরে উষ্ণ অঞ্চলে ঠেলে দিয়েছে। ওয়াল্ট মেইয়ার নামে একজন জলবায়ু বিশেষজ্ঞ বলছেন, ওই উষ্ণ অঞ্চলে গিয়ে বরফখণ্ডগুলো আরও ভেঙে যায় ও তারপর গলে যায়। আমার কাছে মনে হয় এটা প্রকৃতির পরিবর্তনেরই একটা অংশ।
১৯৭৯ সালে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বরফের পরিমাণ বোঝার চেষ্টা চলছে আর্কটিকে। সেখানে দ্রুত গতিতে বরফ গললেও অ্যান্টার্কটিকার ক্ষেত্রে তেমন হয়নি। গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ বেড়ে যাওয়ার জন্য অনেক মডেলে অ্যান্টার্কটিকার বরফও দ্রুত গলে যাওয়ার আশঙ্কা করা হলেও তেমনটা হয়নি। মেইয়ার বলছেন, ২০০৮, ২০১৩ তারপর ২০১৫ ও ২০১৬ সালের তথ্যের দিকে তাকালে বরফের পরিমাণের এ্ রেকর্ড হ্রাস খুব একটা বিস্ময়কর নেই।
অ্যান্টার্কটিকাতে যেখানে বরফ হওয়ার মতো পর্যাপ্ত ঠান্ডা আছে, সেখানেই বরফ জমতে শুরু করে। ফগট বলছেন, এখানে বরফ জমার প্রক্রিয়াতে কোনো বাধা আসে না। এ কারণে বরফের আস্তরণগুলো পাতলা হয়, যার জন্য এগুলো বাতাসের সঙ্গে ভেসে যায় আর এটা বিস্তীর্ণ অঞ্চলব্যাপী বিস্তৃত থাকে।
অ্যান্টার্কটিকার বরফের এ পরিমাণ বাতাসের গতিপথ, সমুদ্রের অবস্থা ও তার সঙ্গে এল নিনো ও লা নিনার ওপর নির্ভরশীল।
মেইয়ার বলছেন, বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে অ্যান্টার্কটিকা এখনও সেভাবে উষ্ণায়নের হাওয়া পায়নি। তবে এখানে ব্যতিক্রম অ্যান্টার্কটিকা পেনিনসুলা। গত ৪০ বছরে সেখানে তাপমাত্রা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এখন অ্যান্টার্কটিকায় বরফ কমে যাওয়ার পেছনে বৈশ্বিক উষ্ণতার ভূমিকা থাকতে পারে, কিন্তু এখনই সেটা বলা যাচ্ছে না।
বার্কলি আর্থ অব ক্যালিফোর্নিয়ার জলবায়ু বিশেষজ্ঞ জেক হসফাদার বলছেন, হতে পারে এটার মধ্যে দিয়েই অ্যান্টার্কটিকাতে বরফ গলা শুরু হলো, গত ৫০ বছরে আমরা আর্কটিকে যেমনটা দেখেছি। আবার হতে পারে এটা ক্ষণস্থায়ী একটা পরিবর্তন, যা সামনের বছগুলোতে আবার ঘুরে দাঁড়াবে। তবে দীর্ঘমেয়াদে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলবে।
সূত্র : নেচার।
এনএফ