পাঁচ দশকে ২৫০ প্রযুক্তি ও ১০৫ জাতের ধান উদ্ভাবনে সফল ব্রি
ধান উৎপাদনে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে তৃতীয়। খুব সহজেই আসেনি এ অর্জন। ৭০ এর দশকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশের ধান বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর সাধনায় এ সফলতা মিলেছে।
দেশে নতুন ধান উদ্ভাবন ও এর সফলতা নিয়ে কথা হয় ব্রি’র মহাপরিচালক ও কৃষি বিজ্ঞানী ড. শাহজাহান কবীরের সঙ্গে। আলাপকালে তিনি ঢাকা পোস্টকে নিজেদের উদ্ভাবিত ধানের নতুন জাত নিয়ে নানান তথ্য তুলে ধরেন। প্রতিষ্ঠানটির গত কয়েক দশকের অর্জন নিয়েও কথা বলেন তিনি।
ড. শাহজাহান কবীর বলেন, গত পাঁচ দশকে ব্রি সাতটি উচ্চ ফলনশীলসহ মোট ১০৫টি ধানের জাত ও ২৫০টির বেশি লাগসই কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে ৫৪টি জাত ও দুইশ’র বেশি প্রযুক্তি গত এক যুগে উদ্ভাবন হয়েছে।
এগুলোর মধ্যে বেশকিছু জাত ফলনের দিক থেকে এগিয়ে থাকায় ব্রি মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের আস্থা অর্জন করেছে বলে উল্লেখ করেন ড. শাহজাহান কবীর। তিনি জানান, এরমধ্যে অন্যতম হলো- ব্রি ধান৭১, ব্রি ধান৭৫, ব্রি ধান৭৬, ব্রি ধান৭৭ ব্রি ধান৮১, ব্রি ধান৮৭, ব্রি ধান৮৯ ও ব্রি ধান৯২। এসব জাতের ধান দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে।
ড. শাহজাহান কবীর বলেন, ছেঁটে যেন চালকে অনিরাপদ করতে না হয় এ নিয়েও কাজ করছে দেশের ধান গবেষণার আঁতরঘর খ্যাত ব্রি। ইতোমধ্যে একাধিক প্রিমিয়াম কোয়ালিটি সম্পন্ন জাত উদ্ভাবন করেছে প্রতিষ্টানটির ধান বিজ্ঞানীরা। এগুলোর মধ্য অন্যতম হলো- ব্রি ধান৫০, ব্রি ধান৬৩, ব্রি ধান৭০, ব্রি ধান৭৫, ব্রি ধান৮০, ব্রি ধান৮১, ব্রি ধান৮৪, ব্রি ধান৮৬, ব্রি ধান৮৮ এবং ব্রি ধান৯০।
এ ধান বিজ্ঞানী বলেন, উচ্চফলনশীল, রোগ প্রতিরোধী ও রপ্তানি উপযোগী প্রিমিয়াম ও সুগন্ধি জাত উদ্ভাবনে জিনোম এডিটিং কৌশল ব্যবহার করে সফলতার সঙ্গে কাজ করছেন শতাধিক বিজ্ঞানী। জাত উদ্ভাবনের পাশাপাশি প্রিমিয়াম ও সুগন্ধি জাত রপ্তানি বৃদ্ধি নিয়েও কাজ করছেন ধান বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দূতাবাস ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে উপহার হিসেবে রু-সুগন্ধি চাল দেওয়া হয়েছে।
ভবিষ্যতের কৃষি নিয়েও অনেকগুলো কাজ রয়েছে প্রতিষ্টানটির। বিশেষ করে জলবায়ু মোকাবিলায় সফলতার একাধিক জাত উদ্ভাবন করেছেন ধান বিজ্ঞানীরা। এ বিষয়ে ব্রি’র মহাপরিচালক বলেন, কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বিভিন্ন অভিঘাত সহনশীল ২৬টি ধানের জাত ও লাগসই উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে লবণাক্ততা সহিষ্ণু ১২টি, খরা সহিষ্ণু ৩টি, জলমগ্নতা ও জলাবদ্ধতা সহনশীল ৪টি এবং ঠান্ডা সহনশীল ৪টি জাত সফলভাবে উদ্ভাবন করেছেন ব্রি বিজ্ঞানীরা। এছাড়া সম্প্রতি হাওড়াঞ্চলের জন্য স্বল্প মেয়াদী ও ঠান্ডা সহনশীল জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্যে কেজিএফ এর সহায়তায় ইরি-ব্রি যৌথ উদ্যোগে নতুন প্রকল্পের কাজ চলছে।
মুজিব শতবর্ষের উপহার হিসেবে হাইজিংক সমৃদ্ধ ব্রিধান ১০০ কারিগরি কমিটির অনুমোদন শেষে জাতীয় বীজ বোর্ডে অনুমোদনের জন্য জমা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান ড. শাহজাহান কবীর।
প্রসঙ্গত, ১৯৭০ সালের ১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত ধান গবেষণার এ বাতিঘরকে ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদে আইন পাশের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়। এরপর শুরু হয় ধানের ওপর নিয়ম মাফিক ও আধুনিক গবেষণা কাজ।
কেপিআইভুক্ত হওয়ায় ব্রি খাদ্য নিরাপত্তায় প্রতিষ্ঠায় সব সময় কাজ করে যাচ্ছে। ব্রির প্রযুক্তি দ্রুততার সঙ্গে দেশজুড়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে। আগের নয়টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গোপালগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জে নতুন দুইটি আঞ্চলিক কার্যালয়।
প্রশিক্ষিত জনবল, বিশ্বমানের গবেষণা অবকাঠামো (যেমন-গ্রিন হাউজ, গ্যাস হাউজ, নেট হাউজ, এ্যাক্রিডেটেড ল্যাব), সরকারের নীতি সহায়তা এবং শক্তিশালী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ব্রির এ সক্ষমতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
ব্রির বিজ্ঞানীরা শুধুমাত্র দেশের কৃষক, সম্প্রসারণ কর্মী, তরুণ বিজ্ঞানী এবং ধান চাষে জড়িত অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদেরই প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন না। তারা ভারতীয় বিজ্ঞানীদেরসহ আধুনিক ধানের জাত উন্নয়নের কলা কৌশল সম্পর্কে দেশের বাহিরেও প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছেন।
একে/এমএইচএস